Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিসিসি মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা, পর্যবেক্ষণে স্থানীয় সরকার বিভাগ

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ আগস্ট ২০২১ ২২:১৮

ঢাকা: ব্যানার, পোস্টার অপসারণকে কেন্দ্র করে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে হামলা ও নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়ের করা দু’টি মামলায়ই বরিশাল সিটি করপোরেশন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলা মিথ্যা, বানোয়াট উল্লেখ করে বরিশাল বিভাগের নির্বাচিত পৌরসভা মেয়র, কাউন্সিলদের পাশাপাশি প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ জনগণও।

এদিকে মামলা হওয়ার পর থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা বলছেন, মামলায় অপরাধ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার তিনদিন পর শনিবার (২১ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে এসে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ খোদ ওই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। একইসঙ্গে ওই দুই মামলায় সিটি করপোরেশনের যেসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাদের গ্রেফতার না করারও অনুরোধ জানান।

বরিশালের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকে শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ১৯ আগস্ট মেয়রকে মামলার আসামি করার পর থেকেই নানা মহল থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়। মামলা প্রত্যাহারের প্রতিবাদে ওইদিন বরিশাল থেকে বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও ১৩ ঘণ্টা পর গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। গত দু’দিন ধরে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। যে কারণে চরম অসুবিধায় পড়েছেন সাধারণ শহরবাসী। কারণ ঘর থেকে কোনো ময়লা নেওয়া হচ্ছে না। আবার রাস্তাঘাটও পরিস্কারের নামেননি তারা।

এই পরিস্থিতির মধ্যে শনিবার (২১ আগস্ট) নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি ওই রাতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশেনের যেসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে সে মামলায় যেন তাদের গ্রেফতার না করা হয়।’

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগের পৌরসভা মেয়রেরা। শনিবার (২১ আগস্ট) বরিশাল রিপোর্টাস ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ উল্লেখ করেছেন তারা।

গৌরনদী পৌরসভার মেয়র হারিসুর রহমান হারিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিনা কারণে এমন একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ইউএনও ঘটিয়েছে। সাদিক আবদুল্লাহ শুধু বরিশালের মেয়রই নন তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য, তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনা স্বাভাবিক বিষয় না। আমরা মামলা প্রত্যাহারের পাশপাশি তার অপসারণ চেয়েছি এবং এই ঘটনার সঠিক তদন্তও আশা করছি। যাতে ভবিষ্যতে এমনভাবে কোনো সম্মানিত রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে এমন ঘৃণ্য অভিযোগ না তুলতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগস্ট শোকের মাস, আমরা এই শোকের মাসে বড় কোনো কর্মসূচি দেবো না। গণমাধ্যমের মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি, না হলে সেপ্টেম্বরে বড় ধরনের কর্মসূচিতে যাবো।’

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান একসময় কলাপাড়া উপজেলার ইউএনও ছিলেন। সেখানে মানুষের সঙ্গে অসদাচরণের কারণে কর্মস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হোন তিনি। তিনি যে বেপোরোয়া, তা গত ১৮ আগস্ট মেয়রের বিরুদ্ধে গুলিবর্ষণ হামলার অভিযোগই প্রমাণ করে।’ তিনি মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি ওই ইউএনওর অপসারণ দাবি করেন।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরিশাল আওয়ামী লীগের বিভক্তি শুরু হয় সাবেক সিটি করপোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর থেকে। তার কিছু সমর্থক বর্তমান সংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান। এরপর থেকে জাহিদ ফারুক ও মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এই দুই গ্রুপে বিভক্তি দেখা দেয় বরিশাল আওয়ামী লীগে।

তবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে হঠাৎ এমন উত্তেজনার কারণ সম্পর্কে কেউই স্পষ্ট বলতে চান না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র বলছে, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক রোববার (২২ আগস্ট) বরিশালে কোনো এক কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তারা মনে করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সঙ্গে প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে মেয়রের ওপরে এমন অভিযোগ আনা হতে পারে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে মেয়রকে অপসারণ চেয়ে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেটাও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর হাত থাকতে পারে বলে ধারণা করেন। কারণ বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি কবীর বিন আনোয়ার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।

বরিশালে সংঘর্ষের জেরে জনদুর্ভোগ

মেয়রের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনা অবশ্যই তদন্ত হবে। যেহেতু এর মামলা হয়েছে, আমরা মামলা পর্যবেক্ষণ করছি। যদি দোষী প্রমাণিত হয় তবে জনপ্রতিনিধিরা অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনে যে বিধান আছে, সেটাই নেওয়া হবে।’

আইনে যা আছে
স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ এর ১২ নম্বর ধারায় মেয়র ও কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করা প্রসঙ্গে বলা আছে, কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র বা কাউন্সিলরের অপসারণ ধারা ১৩ এর অধীন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হয়েছে সেক্ষেত্রে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে, ক্ষেত্রমতে, মেয়র বা কোনো কাউন্সিলরকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে।

এ আইনের ১৩ নম্বর ধারায় নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হলে, অসদাচারণ বা ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়মবিধি বর্হিভূত কার্যকলাপের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে মেয়র বা কাউন্সিলর নিজ পদ থেকে অপসারণযোগ্য হবেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বরিশালে পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় ছাত্রলীগ সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, ওই রাতে থানা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ কর্মীরা হামলা চালায়। ওই সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। আর এতে প্যানেল মেয়রসহ বেশ কয়েকজন আহত হোন। ওই ঘটনায় পরের দিন ১৯ আগস্ট বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে একটি মামলা দায়ের করেন সদর থানার ইউএনও মুনিবুর রহমান। আরেকটি করেন কোতোয়ালী মডেল থানার উপ পরিদর্শক শাহজালাল মল্লিক। দুই মামলাতেই মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

টপ নিউজ বরিশাল সিটি করপোরেশন বিসিসি মেয়র মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ স্থানীয় সরকার বিভাগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে হামলার হুমকি!
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর