এবার সত্যিই ‘সোনা ফলাবেন’ সাকিব
২৩ আগস্ট ২০২১ ০০:৪৪
সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘গোল্ডেন বয়’। ব্যাটে-বলে সমানতালে মাতিয়ে চলেছেন মাঠ। মাঠের বাইরেও উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব যেখানেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলেছে। তবে এবারে আর রূপক অর্থে নয়, সত্যি সত্যি সোনা ফলাবেন সাকিব। ব্যবসায়ী সাকিব যে এবার শুরু করছেন সোনার ব্যবসা!
সাধারণ ক্রেতাদের লাভবান করা, ব্যবসায় স্বচ্ছতা এবং ব্যবসায় হয়রানি মুক্তি— এমন লক্ষ্য নিয়েই যাত্রা শুরু করেছে সাকিবের প্রতিষ্ঠান ‘বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোং’। সম্প্রতি লাইসেন্স নিয়েছে এই কোম্পানি, যেটি বিদেশ থেকে বৈধভাবে সোনার বার ও অলংকার আমদানি করবে।
২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি পেয়েছে ‘বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোং’। ঢাকা, রংপুর ও কুমিল্লা— এই তিন জেলায় অফিস নিয়ে এরই মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিদেশ থেকে সোনার বার ও সোনার অলংকার আমদানিও শুরু করেছে।
সাকিব বলেছেন, খেলার মাঠে যেভাবে দেশের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়ে চলেছেন, সৎ থেকে সোনার ব্যবসাতেও সুনাম কুড়তে চান।
সারাবাংলা ডটনেটের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের নতুন ব্যবসার বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছেন সাকিব। এক প্রশ্নের উত্তরে দেশসেরা ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি যেদিন থেকে খেলছি, দেশের জন্য খেলছি। এখন আমি এই সোনার ব্যবসা দিয়েও দেশের মানুষের সেবা করতে চাই। এখন ক্রিকেটের মাধ্যমে আমি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি এবং দেশের সেবা করে চলেছি। ক্রিকেট পরবর্তী জীবনেও আমি বৈধ ও হালালভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।’
https://youtu.be/KXg0gPoMmnY
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মীয় দিক থেকে সোনার ব্যবসা সম্পূর্ণ হালাল একটি ব্যবসা। সোনার অলংকারের ব্যবহার ও মজুত— দু’টোই হালাল। এসব বিবেচনায় আমি সোনার ব্যবসায় যুক্ত হয়েছি।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশে সোনার ব্যবসায়ীদের বহুল প্রতীক্ষিত ‘স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮’ অনুমোদন পায়। এই নীতিমালার আলোকেই ‘বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোং’সহ ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে সোনার বার ও অলংকার আমদানির লাইসেন্স ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্ভাবনাময় এই ব্যবসায় যুক্ত হতে পেরে সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন সাকিব। বলেন, ‘কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। তার সময়োপযোগী ও দূরদর্শী পদক্ষেপের ফলেই সম্ভাবনাময় এই ব্যবসা খাতটি দেশে প্রসারের সুযোগ পেল এবং সেটি বৈধ উপায়ে।’
শত শত বছর ধরে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো বাঙালিও সোনার ব্যবসা করে আসছে। তবে এর কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না। স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার এই কর্মকাণ্ডকেই বৈধতা দিয়েছে। সাকিব বলেন, গোটা বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়ভাবে যে প্রতিষ্ঠিত চর্চা ছিল, দেশের প্রথম এই ‘স্বর্ণ নীতিমালা’ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটির একটি আইনি ভিত্তি করে দিলেন।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সেরা বোলার এবং অন্যতম সেরা ব্যাটার-ফিল্ডার সাকিব। দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার তো বটেই, আইসিসি র্যাংকিংয়ে একসঙ্গে তিন ফরম্যাটেই শীর্ষ অলরাউন্ডারের সিংহাসনে বসে ছিলেন বহু দিন। এই মুহূর্তে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি শীর্ষ অলরাউন্ডার তিনি। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকা করলে সাকিবের নামটা নিশ্চয় রাখতে হবে।
এই সাফল্য আর এর পেছনের নিষ্ঠা ও নিবেদনকে সাকিব অনূদিত করতে চান ব্যবসায়ের ময়দানেও। বলেন, ‘আমি যেদিন থেকে খেলছি, দেশের জন্য খেলছি। এখন আমি এই স্বর্ণ ব্যবসা দিয়েও দেশের মানুষের সেবা করতে চাচ্ছি। এখন ক্রিকেটের মাধ্যমে আমি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি এবং দেশের সেবা করে চলেছি। ক্রিকেট পরবর্তী জীবনেও আমি বৈধ ও হালালভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।’
এই ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণ ক্রেতা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী— দুই পক্ষই লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন সাকিব। বলেছেন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনার কথাও। সাকিব বলেন, ‘আমাদের অফিস ঢাকা, রংপুর এবং কুমিল্লা এই তিন জায়গাতে আছে। বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোং বিদেশ থেকে সোনার বার এবং সোনার অলংকার আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে বৈধভাবে সোনা আমদানি করে ব্যবসা করলে অলংকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীরা বা সাধারণ ক্রেতারা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি ব্যবসায়িক স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে। একইসঙ্গে ব্যবসায়িক হয়রানি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন, সোনার গুণগত মান এবং ওজনের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারবেন।’
‘ব্যবসায়ীরা আপরিশোধিত সোনার আকরিক এবং আংশিক পরিশোধিত সোনা পরিশোধন করে দেশেই বিভিন্ন গ্রেডের সোনার বার, কয়েন ও সোনার অলংকার তৈরি করতে পারবেন। দেশের চাহিদা মেটানোর পর রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব। আমরা যে সোনা আমদানি করছি, সেটি তো ক্রেতার কাছেই যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতারা যেন সঠিক মাপ ও মানের বিশুদ্ধ সোনা পায়, সেটি আমরা নিশ্চিত করছি,’— বলেন সাকিব।
https://www.facebook.com/107651004842833/videos/587208595981008/
বাংলাদেশে সোনা ব্যবসায়ের উপযোগিতাও ব্যাখ্যা করেছেন সাকিব। বলেছেন, করোনায় অর্থনৈতিক আঘাত মোকাবিলায় সোনার মজুত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা করোনাভাইরাসের অভিঘাত দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক মুদ্রার তুলনায় টাকার মান কমে যেতে পারে।
সাকিব বলেন, আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ বাজারে অর্থনৈতিক মন্দাতে সোনার মতো মূল্যবান ধাতবের দাম বাড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো সোনার মজুত বাড়িয়ে দেয়। আমি চাচ্ছি বাংলাদেশের জনগণ এটি অনুধাবন করবে এবং যতটাসম্ভব সোনার মজুত বাড়িয়ে নেবে।
‘ব্যবসায়ী সাকিব’ আপাতত ছুটির মুডেই আছেন। ঘরের মাঠের অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন সাকিব। তবে বেশিদিন থাকা হচ্ছে না। সবকিছু ঠিক থাকলে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি খেলতে ২৪ আগস্ট বাংলাদেশে পা রাখার কথা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের। সে হিসবে ক’দিনের মধ্যেই দেশে এসে অনুশীলনে নেমে পড়তে হবে বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে।
সারাবাংলা/এসএইচএস/আরএফ/টিআর
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোং ব্যবসায়ী সাকিব সাকিব আল হাসান স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮