‘স্বাভাবিক জোয়ারেই প্লাবিত উপকূল, হুমকিতে জীবন-জীবিকা’
২৪ আগস্ট ২০২১ ১৮:২১
ঢাকা: উপকূলীয় অঞ্চলের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে জনজীবনে সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এরপর করোনা পরিস্থিতি এবং সুপার সাইক্লোন আম্ফান ও ইয়াসের আঘাত সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এই সংকট দেখা দিলেও এখন স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেই উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে ওই অঞ্চলের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তারা এই দাবি জানান। নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ফেইথ ইন অ্যাকশন’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন উপকূলীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন খুলনা-৬ আসনের মো. আক্তারুজ্জামান বাবু, বাগেরহাট-৪ আসনের মো. আমিরুল ইসলাম মিলন, পটুয়াখালী-৩ আসনের এস এম শাহজাদা এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সৈয়দা রুবিনা আক্তার (বরিশাল) ও অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার (খুলনা)।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, শুধু জোয়ারের পানিতে উপকূলের নিম্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে তা নয়, সাতক্ষীরা শহরেও জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। তাই টেকসই বেড়িবাঁধের পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে হবে।
সংসদ আমিরুল আলম মিলন বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকার জনগণ ঘূর্ণিঝড় সিডরের ক্ষত এখনো বহন করে বেড়াচ্ছে। আকাশে মেঘ দেখলেই ওই এলাকার জনমনে আতঙ্ক দেখা দেয়। এই আতঙ্ক থেকে রক্ষায় উপকূলে টেকসই বাঁধের পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।
সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে বেড়িবাঁধের ওপর। বাঁধের ক্ষতি হলে তাদের সবকিছু ভেসে যায়। বাড়িঘর নষ্ট ও ফসলের ক্ষতি হয়। তাই ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে জরুরি খাবার না দিয়ে, বাঁধটা শক্ত করে বানিয়ে দেওয়ার দাবিটাই প্রধান।
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উপকূলের অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে উল্লেখ করেন সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা। তিনি বলেন, গুরুত্ব বিবেচনায় না নিয়ে ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। অথচ উপকূলের জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো পাসের অপেক্ষায় পড়ে থাকে।
সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, ‘কাউকে পিছনে ফেলে নয়, সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে’— প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়ন হলেই উপকূলের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুযায়ী সংকট মোকাবিলায় সরকার এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
নদ-নদীয় শুকিয়ে যাওয়া উপকূলের জনজীবনে সংকট বেড়েছে উল্লেখ করে সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, আমরা সংকট সমাধানে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। করোনা পরিস্থিতি বাধা তৈরি করলেও আগামীতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যাবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়ন কাজ সহজতর হবে বলে তিনি আশাবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া সারাদেশের মতো উপকূলীয় এলাকায় পৌঁছালেও টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে তা আজ ঝুঁকির মুখে। তাই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ তহবিল গঠন করতে হবে। জাতীয় বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ বাস্তবায়নে সমম্বয় করে উপকূলীয় এলাকার জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে সম্পৃক্ত করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। লবণাক্ততার আগ্রাসনের শিকার উপকূলের সুপেয় পানির সংকট নিরসন এবং মৎস্য ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। উপকূলের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অবিলম্বে হাওর উন্নয়ন বোর্ডের মতো উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।
আলোচনায় আরও অংশ নেন ডিআরইউ সভাপতি মোরসালিন নোমানী, ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী শুভ, নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, কেএনএইচ জার্মানির প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মুকুল, ফেইথ ইন অ্যাকশনের নির্বাহী পরিচালক নৃপেন বৈদ্য, স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল, সচেতন সংস্থার সাকিলা পারভীনসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর