ধারাবাহিক গড় আয়ুর তথ্য পেতে আসছে নতুন প্রকল্প
২৫ আগস্ট ২০২১ ০৮:৪৩
ঢাকা: গড় আয়ুসহ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সূচকের তথ্যপ্রাপ্তি অব্যাহত রাখতে নতুন প্রকল্প নিচ্ছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) তৃতীয় পর্যায় প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ৩০ জুন এ প্রকল্পটি শেষ হয়ে যায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্পটি স্টিয়ারিং কমিটির চতুর্থ সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী।
প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক সারাবাংলাকে জানান, সদ্য সমাপ্ত প্রকল্পের তথ্য ডুয়েল রেকর্ডিং সিস্টেমে সংগ্রহ করা হয়। আগামী জনশুমারির পরে স্যাম্পল রেকর্ডিং সিস্টেম অর্থাৎ অনলাইনে তথ্য সংগ্রহের জন্য পরবর্তী অর্থবছরে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। অর্থাৎ ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে অনলাইনে স্যাম্পল রেকর্ডিংসিস্টেমে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি চলতি বছরের ৩০ জুনে সমাপ্ত হলেও ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রণয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য এরইমধ্যে দুই বছর মেয়াদে একটি প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে যার অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রকল্পটি অনুমোদন পেতে পারে।
সূত্র জানায়, এমএসভিএসবি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ৪৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে গত ৩০ জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন করে বিবিএস।
স্টিয়ারিং কমিটির সভার কার্যবিবরণীর তথ্যমতে, সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন- প্রকল্পটি বিবিএসের একটি ধারাবাহিক প্রকল্প। কারণ দুটি শুমারির মধ্যবর্তী বছরগুলোর জনতত্ত্ব বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত প্রতি বছর এ প্রকল্পের মাধ্যমে বার্ষিক প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। এ প্রকল্পের নমুনা এলাকা আদমশুমারি-২০১১ এর ফ্রেমের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে দুই হাজার ১২টি নমুনা এলাকা রয়েছে। পরবর্তীতে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য জনশুমারির ফ্রেমের ওপর ভিত্তি করে নতুন ইন্ট্রিগ্রেটেড মাল্টি পারপোজ স্যাম্পল ডিজাইন (আইএমপিএস) অর্থাৎ নতুন নমুনা এলাকা নির্বাচন করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক সভায় জানান, প্রকল্পটির আওতায় গত বছরের ৩০ জুনে রিপোর্ট অন স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটাটিকস ২০১৯ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, এখন প্রকল্পের গত বছরের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা রিপোর্ট অন স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটাটিকস ২০২০ এর প্রতিবেদন চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই প্রকল্পটি থেকে প্রতি বছর গড় আয়ুর পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আরএডিপি’তে প্রাপ্ত বরাদ্দ ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার মধ্যে ১৫ শতাংশ অর্থ অর্থাৎ তিন কোটি ২৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা সংরক্ষণ কাজে, দুই হাজার ১২ জন স্থানীয় মহিলা রেজিস্ট্রারদের এক মাসের পারিশ্রমিক বাবদ এক কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকা এবং সুপারভাইজার ও সুপারভাইজিং কর্মকর্তাদের দুই মাসের যাতায়াত ভাতা বাবদ ৪২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ও অন্যান্য ব্যয়সহ আরও এক কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এই অর্থ পাওয়া না গেলে চলতি বছরের জুনের বেতন-ভাতা বকেয়া থেকে যাবে।
সভার সভাপতি মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, বিবিএস’র এ প্রকল্পটি থেকে প্রতিবছর গড় আয়ুসহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভাইটাল স্ট্যাটাটিকস প্রণয়ণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে প্রস্তাবিত ধারাবহিক প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে হবে।
সমাপ্ত প্রকল্পের বরাদ্দ শতভাগ দেওয়ার কথা থাকলেও কেন ১৫ শতাংশ অর্থ সংরক্ষণ বাবদ রাখা হলো- এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, অর্থ বিভাগ থেকে আইবাসে প্রত্যেক প্রকল্পের ১৫ শতাংশ অর্থ সংরক্ষণ বাবদ ৮৫ শতাংশ ব্যয়যোগ্য অর্থ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ১৫ শতাংশ সংরক্ষিত অর্থ প্রকল্পের বেতন-ভাতা পরিশোধ প্রয়োজন জানিয়ে এ বিভাগ থেকে অর্থ বিভাগে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপসচিব, উন্নয়ন-১ বেগম নূরজাহান সভায় বলেন, বিবিএস’র প্রস্তাবের আলোকে চলতি বছরের ১১ মে এ বিভাগ থেকে অর্থ বিভাগে সংরক্ষিত ১৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হলে অর্থ বিভাগ থেকে চলতি বছরের ২৪ মে চিঠিতে বিবিএস’র অনুমোদিত অপর প্রকল্প হতে সমপরিমাণ অর্থ আন্তঃপ্রকল্প সমন্বয় পুনঃউপযোজনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে পাঠানোর জন্য বলা হয়। বিষয়টি বিবিএস’কে পত্র দিয়ে জানানো হয়। কিন্তু বিবিএস থেকে এ বিষয়ে পরবর্তীতে পুনঃউপযোজনের কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি।
সভাপতি আরও বলেন, গত মাসের মাসিক এডিপি পর্যালোচনা সভায়ও এ বিষয়টি আলোচনা হয়েছে এবং মহাপরিচালক বিবিএস’কে প্রকল্প গুলোর পুনঃউপযোজনের একটি সমন্বিত প্রস্তাব এ বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তারপরও অর্থবছর সমাপ্তির এ পর্যায়ে এসে আজকের সভায় কেন সমস্যা উত্থাপন করা হলো এ বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে অতিদ্রুত বিষয়টি সুরাহা করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রকল্প পরিচালককে দায়িত্ব দেন।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস