জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং জোরদার হবে
২৫ আগস্ট ২০২১ ১৫:৫৩
ঢাকা: চাল, চিনি, ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের সব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হবে। সেই সঙ্গে প্রতি কেজি চিনির দাম ৭৫-৮০ টাকার মধ্যে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
বুধবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়।
গত মে মাসের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২৯ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, পাম সুপার তেল ১১২ টাকা এবং ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ৭২৮ টাকা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে চিনির দাম বাড়ছে। গত এক মাসে দেশের খুচরা বাজারে চিনির দাম অন্তত ১২ শতাংশ বেড়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘চিনির খুচরা মূল্য আপাতত ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকার মধ্যেই থাকবে বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে আজকের আলোচনায় বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। এটি ছিল বছরের প্রথম বৈঠক, তাই ওইভাবে কোনো সিদ্ধান্তের কথা বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা নিয়ম-নীতি মেনে ব্যবসা করার কথা ব্যবসায়ীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। উনারাও আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়।
সভায় আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম আগে যা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটিই থাকবে। আগস্ট মাস শোকের মাস বিবেচনায় এই মাসেই নতুন করে তেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও সেটি পরে বিবেচনা করা হবে।’
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমাদের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, সরবরাহ যথেষ্ট আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বার্ষিক চাহিদার চেয়েও পণ্য সরবরাহ বেশি আছে। আমাদের অনেকগুলো পণ্য আমদানি নির্ভর, তাই আমদানি মূল্য বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে মূল্য বৃদ্ধি ও মজুত যেন না করা হয় সে উদ্দেশে আজকে আমরা ব্যবসায়ী নেতাদের ডেকেছি। সবখাতের ব্যবসায়ীরা এখানে এসেছেন। তারা আজকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমদানি মূল্য যেটিপ বাড়বে সেই অনুযায়ী হিসাব করে পণ্যের মূল্য যতটুকু বৃদ্ধি করা দরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে সেটুকুই তারা করবেন।’
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আমরা জেলা ও উপজেলা কমিটির ক্ষেত্র বিস্তৃত করব। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে আমরা টিসিবির অপারেশন গত বছরের তুলনায় আড়াই গুণ বৃদ্ধি করেছি এবং টিসিবি আরও কয়েকটি পণ্য বিক্রি করছে। আগামী মাস থেকে পেঁয়াজসহ আরও পণ্য বিক্রি শুরু হবে। আমরা সেখানেও আমদানি করছি। চালের বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয় দেখছেন। এরইমধ্যে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ২৫ শতাংশ ট্যাক্স কমানো হয়েছে। সাত লাখ টনের বেশি আমরা অনুমতি দিয়েছি, আশা করি চালের বাজারে দাম কমে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘ভোজ্যতেল এবং চিনির বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই দুটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, বাকিগুলো কমে গেছে। এটি আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটির রিফ্লেকশন হবে, তবে সেটি বাজারের নিয়মেই হবে। তার বেশি যেন না হয় ব্যবসায়ীরা সেটির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে কেউ যদি অন্যায়ভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কষ্ট দেন বা অতি মুনাফা করেন, পণ্য মজুত করে রাখেন সে ক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মোবাইল কোর্ট, ভোক্তা অধিকার কমিশনসহ যারা আছেন তারাও সর্বত্র সতর্ক থাকবেন। এই করোনাকালে মানুষের প্রশান্তির জন্য যা যা করা দরকার সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয় আমরা যদি সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে পারি তাহলে পণ্য সরবরাহে কোনো ঘাটতি থাকবে না।’
সারাবাংলা/জিএস/একে