Wednesday 09 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিধিনিষেধ শেষ হতেই বেড়েছে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৬ আগস্ট ২০২১ ১০:৪৬ | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২১ ১১:১৯

ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বরাবরের মতোই তাদের ‘টার্গেট’, গ্রাম থেকে রাজধানীতে আসা ব্যক্তিরা। তাদের সংজ্ঞাহীন করার ওষুধ খাইয়ে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে এসব চক্র।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত এপ্রিল থেকেই চলছে বিধিনিষেধ। এর মধ্যে কখনো বিধিনিষেধ ছিল কঠোর, কখনো কিছুটা শিথিলতা ছিল। সবশেষ গত ১১ আগস্ট সরকার সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেয়। ওই দিন থেকেই শুরু হয় সব ধরনের গণপরিবহনের চলাচল। চলতে শুরু করে লঞ্চও। খুলে দেওয়া হয় দোকানপাট। চালু হয় কলকারখানা। গ্রামে থাকা মানুষজনও ফের ঢাকায় আসতে শুরু করে। রাজধানীতে শুরু হয় যানজট। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্যরা মাঠে সক্রিয় হয়।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, গত ১১ আগস্টের পর থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির হাতে সাধারণ মানুষের হয়রানির শিকার হওয়ার অন্তত পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। এর একটি শ্যামলীতে, একটি ফার্মগেটে, একটি গুলিস্তানে, একটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ও একটি যাত্রাবাড়ী এলাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা এদের কারও সঙ্গে ক্ষণিকের সম্পর্ক তৈরি করে জুস, কাউকে চকলেট আবার কাউকে সুগন্ধী শুঁকিয়ে অজ্ঞান করে সবকিছু লুট করে নেয়। পরে ভিকটিমদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গত ২১ আগস্ট ঢামেক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে এক রোগীর স্বজনদের জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনা ঘটে। অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের শিকার ভুক্তভোগীরা হলেন— জহুরা খাতুন (৬০), তার মেয়ে জামাই আমির হোসেন (৩৫) এবং জহুরা খাতুনের নাতনী সুমনা আক্তার (২০)।

ঢামেকে গাইনি ওয়ার্ডে রোগীর স্বজনদের জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার লুট।

অজ্ঞান পার্টির শিকার হওয়া সুমনার দুলাভাই শাহ আলম জানান, তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। তার স্ত্রী সুমি আক্তার (২২) গাইনি সমস্যা নিয়ে গত ২০ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২১২ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তার সঙ্গে থাকা তিন জন স্বজনকে অচেতন করে মোবাইল, টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। শাহ আলম বলেন, ‘আমি স্ত্রী সুমির সঙ্গে ওয়ার্ডের ভেতরে ছিলাম। অসুস্থ তিন জন ২১২ নম্বর ওয়ার্ডের করিডোরে অবস্থান করছিলেন।’

অসুস্থ আমির হোসেন জানান, শনিবার (২১ আগস্ট) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে তখন একজন মহিলা এসে আমাদের সঙ্গে গল্প করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে রাতে আমাদের তিন জনকে জুস খেতে দেন। আমরা সরল বিশ্বাসে জুস খেয়ে ফেলি। পরে আর কিছুই মনে নেই।

শাহ আলম বলেন, আমরা মনে করেছিলাম তারা ঘুমিয়ে আছেন। পরে সকালের দিকে তাদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝতে পারি, তারা অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে অচেতন হয়েছেন। ওই তিন জনের কাছ থেকে আনুমানিক ১০ হাজার টাকা দামের দু’টি মোবাইল ও স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে।

হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড মাস্টার আবু সাঈদ জানান, রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তিন জনকে জুস খাইয়ে অচেতন করা হয়েছে। তবে তারা ২১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাইরে ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। কোনো ওয়ার্ড বয় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানান, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তিন স্বজনকে অচেতন করে টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে। বিষয়টি হাসপাতাল পরিচালক ও শাহবাগ থানাকে জানানো হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, গাইনি ওয়ার্ডে তিন জনকে অচেতন করে মালামাল খোয়া যাওয়ার ঘটেছে। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ওই নারীর আগে পরিচয় ছিল কি না, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অজ্ঞান পার্টির শিকার হয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন রুবায়েত হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বগুড়া থেকে ঢাকায় এসে টেকনিক্যালে নেমে ৮ নম্বর পরিবহনে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলাম। এক বন্ধু ফোন করে ফার্মগেটে নামতে বলে। শ্যামলী আসার পর আর কিছু বলতে পারি না। এরপর ফার্মগেট থেকে হাসপাতালে কেউ নিয়ে আসে। মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও টাকা-পয়সা কিছুই পাইনি।

রুবায়েতের ধারণা, পাশের বা পেছনের সিটের কেউ তাকে সুগন্ধী কিছু নাকে দিয়ে এরকম কিছু ঘটিয়েছে। তার মতোই আরেকজন ভর্তি আছেন একই হাসপাতালে। পাশের জনের অনুরোধে চকলেট খেয়ে মোবাইল ফোন খুইয়েছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই ব্যক্তি।

অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী ও গুলিস্তান ফুলবাড়িয়ায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের শিকার হয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে ভর্তি আছেন দু’জন। জানা গেছে, তাদের একজন চানাচুর ভাজা খেয়ে, অন্যজন হকারের কাছ থেকে জুসের বোতল কিনে খাওয়ার পর এই ঘটনার শিকার হন। তারা সুস্থ হলেও খোয়া গেছে মোবাইল ফোন ও পকেটে থাকা সব টাকা।

অজ্ঞান পার্টির শিকার হওয়া ভুক্তভোগীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে, অজ্ঞান পার্টির সদস্য বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশে গাড়িতে ওঠেন। এদের সঙ্গে অনেক গাড়ির চালক ও হেলপারদের পরিচয় থাকে। অনেক সময় এদের চিনতে পেরেও তাদের নামিয়ে দেওয়া হয় না। গাড়িতে কেউ অজ্ঞান পার্টি বা মলম পার্টির শিকার হলে তারাও ভিকটিমকে কোনো ফুটপাতে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে অপরিচিত কোনো পথচারী হয়তো পুলিশে খবর দেন অথবা হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দেন ভুক্তভোগীকে।

বাসের স্টাফরা এর সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত কি না, তা পুলিশকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা। আর পুলিশ সদস্যরা বলছেন, তারা এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, রাজধানীতে যানজট বেড়ে যাওয়া এবং গণপরিবহন স্বাভাবিক হওয়ার পর দুয়েকটি অজ্ঞান পার্টির ঘটনা জানতে পেরেছি। এ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। শিগগিরই এই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর