Tuesday 12 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিড়িয়াখানার নতুন চমক হাতির ফুটবল খেলা

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ আগস্ট ২০২১ ১৬:৫০

ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর নতুন চমক নিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হলো জাতীয় চিড়িয়াখানা। বন্ধের এই বিরতিতে অবশ্য দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য বেশকিছু নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে অন্যতম— চিড়িয়াখানার ‍দুই হাতি বীর বাহাদুর ও সুন্দরীর ফুটবল খেলা!

হ্যাঁ, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকার সময়ে এই দুই হাতিকে ফুটবল খেলা শেখানো হয়েছে। দর্শনার্থীরা যখন চিড়িয়াখানা ভ্রমণ করবে, তখন এই দুই হাতির ফুটবল খেলা দেখতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মো. আব্দুল লতিফ সারাবাংলাকে বলেন, এই হাতি দুইটিকে ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা খেলার মাধ্যমে একজন আরেকজনকে ফাঁকি দিয়ে গোলও করতে পারে। এতদিন গল্প শুনেছি, থাইল্যান্ডের চিড়িয়াখানার পশুপাখি নানা ধরনের খেলা দেখায়। এবার দেশের জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীরা হাতির ফুটবল খেলা দেখে বিনোদন পাবেন। দীর্ঘ বিরতির পর চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীরা এলে এরকম বেশকিছু নতুনত্বই দেখতে পাবেন।

গত ১১ আগস্ট থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জারি করা সব ধরনের বিধিনিষেধ শিথিল করে দেয় সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিনোদনকেন্দ্রগুলোও চালুর অনুমতি দেওয়া হয়। তবে খুলে দেওয়া হয়নি চিড়িয়াখানা। প্রাথমিকভাবে আরও কিছুদিন পরে চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাড়ে চার মাস বন্ধ থাকার পর শুক্রবার (২৭ আগস্ট) খুলে দেওয়া হচ্ছে ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানা। তবে চিড়িয়াখানায় ঢুকতে হলে দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, চিড়িয়াখানার বিষয়টি অন্য বিনোদনকেন্দ্রগুলোর তুলনায় একেবারেই আলাদা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে কোনো পশুপাখি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি বর্তমানে ভালোর দিকে যাচ্ছে বলেই চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সকালে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তা প্রচার হতে সময় লাগেনি। বরং প্রথম দিন শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে জাতীয় চিড়িয়াখানায়।

কাউন্টারের ভিড় এড়াতে চিড়িয়াখানার জন্য অনলাইনে টিকিট বিক্রির বিষয়টিও আলোচনায় ছিল। তবে পরিচালক জানালেন, কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সে কারণে তারা অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে যেতে পারছেন না এখনই। আপাতত কাউন্টার থেকেই টিকিট বিক্রি করা হবে।

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি দর্শনার্থীর সংখ্যায় কোনো বিধিনিষেধ থাকছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ড. লতিফ বলেন, কোনো বিধিনিষেধ দেওয়া হবে না। চিড়িয়াখানার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার দর্শনার্থী আসতে পারেন। বন্ধের দিন শুক্র ও শনিবার তা বেড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার হলেও কোনো সমস্যা হবে না। চিড়িয়াখানায় যে বিশাল জায়গা, সেখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক আসলেও কোনো সমস্যা হবে না।

দর্শনার্থীদের সংখ্যায় বিধিনিষেধ না থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব অনুসরণকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানালেন চিড়িয়াখানা পরিচালক। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে চিড়িয়াখানায় যে পরিমাণ লোক সমাগম হতো, এখন একই পরিমাণ লোক এলেও কোনো সমস্যা হবে না। তবে দর্শনার্থীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

দীর্ঘ সাড়ে চার মাস বন্ধের সময় চিড়িয়াখানায় পশুপাখির বংশবিস্তার ঘটেছে বেশ নির্বিঘ্নে। পরিচালক জানান, এই সুযোগে পশুপাখির সংখ্যা বেড়েছে চিড়িয়াখানায়। বিশেষ করে হরিণ, ময়ুর ইম্পালা, জলহস্তি, জেব্রা, জিরাফ ও কয়েল পাখিসহ বেশকিছু পশুপাখির প্রজনন হয়েছে এই সময়ে। এই সময়ে কেবল ময়ুরই বাচ্চা দিয়েছে ১৩০টির মতো। এগুলো দর্শনার্থীদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা ইম্পালাও নতুন বাচ্চা দিয়েছে। সেগুলো লালনপালন করে বড় করছি। সব মিলিয়ে চিড়িয়াখানায় প্রাণীর সমাগম আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।

চিড়িয়াখানার বর্তমান পরিবেশেরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে বলে জানালেন ড. লতিফ। বলেন, ভেতর ও বাইরের পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। গেট সংলগ্ন বাস স্ট্যান্ডটি সরানো হয়েছে। এতে মানুষ গেটের সামনে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন। গেটটি দর্শনীয় ও রাজকীয়ভাবে বানানো হয়েছে। ভেতরে পুষ্পকানন নামে তিনটি ফুলের বাগান করা হয়েছে। অনেকগুলো শেড হয়েছে, পশুপাখির খাঁচাগুলোকে রঙ করে প্রতিটি খাঁচা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের হাতমুখ ধোয়ার জন্য নতুন করে ১২টি স্থানে শেডসহ কল বসানো হয়েছে।

ছবি: সুমিত আহমেদ

সারাবাংলা/জিএস/এএম/টিআর

চিড়িয়াখানা পরিচালক জাতীয় চিড়িয়াখানা ড. মো. আব্দুল লতিফ হাতির ফুটবল খেলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর