এ বছর শতভাগ ভাতার আওতায় ১৫০ উপজেলা, আবেদন ৩১ আগস্ট পর্যন্ত
২৮ আগস্ট ২০২১ ১২:৫৪
ঢাকা: সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে দেশের ১৫০ উপজেলায় যোগ্য শতভাগ ব্যক্তিকে ভাতা প্রদানের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজ সেবা অধিদফতর। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ভাতার জন্য আগ্রহী ব্যক্তিরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিসিএস) কর্তৃক প্রকাশিত ‘পোভাট্রি ম্যাপস অব বাংলাদেশ-২০১০’(দারিদ্র্যর মানচিত্র) অনুযায়ী দারিদ্র্যপ্রবণ ১৫০টি উপজেলায় বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের ভাতা প্রদান করা হবে। সুবিধাভোগীরা চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ভাতা পাবেন। এর আগে, গত অর্থবছরে সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ দেশের ১১২টি উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় আনা হয়।
চলতি অর্থবছরে দেশের ৩৭ জেলার যে ১৫০টি উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। সেগুলো হলো— বরগুনা জেলার আতমলী, বরগুনা সদর, বামনা, বেতাগী; ভোলার মনপুরা, তজুমদ্দিন; পটুয়াখালীর দশমিনা, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, রাঙ্গাবালী; বান্দরবানের আলীকদম, বান্দরবান সদর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রোয়াংছড়ি, রুমা; চট্টগ্রামের সদ্বীপ, বাঁশখালী; কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া; খাগড়াছড়ির দিঘীনালা, গুইমারা, খাগড়াছড়ির খাগড়াছড়ি সদর, লক্ষীছড়ি, মহালছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, পানছড়ি, রামগড়; লক্ষীপুরের কমলনগর, রায়পুর, রামগতি; নোয়াখালীর হাতিয়া, কবিরহাট, সুবর্ণচর; রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, কাউখালী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, জুরাছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, রাজস্থলী; কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, বাজিতপুর, ভৈরব, হোসেনপুর, ইটনা, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ সদর, কুলিয়ারচর, মিঠামইন, নিকলী, পাকুন্দিয়া, তাড়াইল; মানিকগঞ্জের দৌলতপুর; রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি; টাঙ্গাইলের মধুপুর; বাগেরহাটের মোংলা; চুয়াডাঙ্গার চুয়াডাঙ্গা সদর; যশোরের বাঘারপাড়া, কেশবপুর, মনিপুরামপুর, শার্শা; ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু, ঝিনাইদহ সদর, মহেশপুর, শৈলকুপা; খুলনার বালিয়াঘাটা, দাকোপ, ডুমরিয়া, দিঘলিয়া, পাইকগাছা, ফুলতলা, রুপসা, মাগুরার মাগুরা সদর, শালিখা, শ্রীপুর; মেহেরপুরে গাংনী; ময়মনসিংহের তারাকান্দা; নেত্রকোণার আটপাড়া, দুর্গাপুর, খালিয়াজুরী,কলমাকান্দা, কেন্দুয়া, মদন, মোহনগঞ্জ, পূর্বধলা; শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী; বগুড়ার ধুনট, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা; নওগাঁর আত্রাই, বদলগাছী, মান্দা, মহাদেবপুর, নওগাঁ সদর, নিয়ামতপুর, পত্নিতলা, পোরশা, রানীনগর, সাপাহার; নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া; চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ; পাবনার সুজানগর; সিরাগগঞ্জের বেলকুচি, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ সদর; দিনাজপুরের বিরামপুর, বীরগঞ্জ, বিরল, বোচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর, কাহারোল, খানসামা, দিনাজপুর সদর, নবাবগঞ্জ, পার্বতীপুর; লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট সদর, নীলফামারীরর ডিমলা, ডোমার, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর; পঞ্চগড়ের পঞ্চগড় সদর; রংপুরের রংপুর সদর; ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও সদর, সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলা হিসেবে শতভাগ ভাতার আওতায় এসেছে।
সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে— শতভাগ ভাতার আওতায় আসা উপজেলার আগ্রহী ব্যক্তিগণ www.bhata.gov.bd এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন ও পৌরসভা ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় তথ্য সেবা নম্বর ৩৩৩ (টোল ফ্রি)তে ফোন করে, উপজেলা/শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের সহায়তায় অনলাইনে আবেদন করা যাবে। আগামী ৩১ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত এই আবেদন করা যাবে। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এজেন্ট ব্যাংক/মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারের (নগদ/বিকাশ) মাধ্যমে হিসাব খুলে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ভাতাভোগীদের প্রথম কিস্তির ভাতা বিরতণ করা হবে।
গত অর্থবছরে দেশের ১১২ উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় এনেছে সরকার। গত বছর যে ১১২ উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় আনা হয়েছে সেগুলো হলো: বাগেরহাটের চিতলমারী, শরণখোলা; বান্দরবানের থানচি; বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, বাকেরগঞ্জ, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়া, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, বরিশাল সদর; ভোলার ভোলা সদর; চাঁদপুরের হাইমচর, কচুয়া, হাজীগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর; কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ; ফেনীর সোনাগাজী; গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সাদুল্যাপুর, সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, পলাশবাড়ী; গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, কোটালীপাড়া; জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, জামালপুর সদর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী; ঝালকাঠির নলছিটি, রাজাপুর; খুলনার তেরখাদা, কয়রা; কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর, রাজারহাট, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, চিলমারী, কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী; লক্ষ্মীপুরের লক্ষ্মীপুর সদর; মাগুরার মোহাম্মদপুর; মৌলভীবাজারের জুড়ি; ময়মনসিংহের নান্দাইল, ময়মনসিংহ সদর, ফুলপুর, ধোবাউড়া, ঈশ্বরগঞ্জ, ফুলবাড়িয়া, হালুয়াঘাট, গৌরীপুর, ত্রিশাল; পিরোজপুরের কাউখালী, নাজিরপুর, ইন্দুরকানি, নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি), ভাণ্ডারিয়া, পিরোজপুর সদর; বাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, পাংশা, গোদাগাড়ী; রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, পীরগাছা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ; সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ, তালা, কলারোয়া, দেবহাটা; শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, ভেদরগঞ্জ, জাজিরা, শরীয়তপুর সদর, নড়িয়া ও ডামুড্যা; শেরপুরের শেরপুর সদর, শ্রীবর্দী, নকলা; সিরাজগঞ্জের চৌহালী; সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ; গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া; কুমিল্লার লালমাই, সদর দক্ষিণ ও লাঙ্গলকোট; লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ, আদিতমারী, পাটগ্রাম; নেত্রকোনার নেত্রকোণা সদর, বারহাট্টা; টাঙ্গাইলের নাগরপুর; সিরাজগঞ্জের কাজিপুর এবং পাবনার বেড়া সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলা হিসেবে শতভাগ ভাতার আওতায় এসেছে।
জানা যায়, দেশে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করছে সরকারের ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভাতা কর্মসূচি হচ্ছে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, হিজড়া ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা।
বর্তমানে বয়স্ক ভাতা পান ৪৯ লাখ জন এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা পান ২০ লাখ ৫০ হাজার জন। ২০২১-২২ অর্থবছরে নতুন করে বয়স্ক ভাতার সুবিধা পাবেন ৮ লাখ ১ হাজার এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা পাবেন ৪ লাখ ২৫ হাজার মানুষ।
এ ছাড়া বর্তমানে ১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরে এই সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার জন বাড়বে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) মো. সাব্বির ইমাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চলতি অর্থ বছরে ৮ লাখ ১ হাজার বয়স্ক, ৪ লাখ ২৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, ২ লাখ ৮ হাজার প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এবার ভাতা প্রত্যাশীদের সুবিধার জন্য অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। ভাতার জন্য ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করা যাবে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে ভাতার আবেদন করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে নতুন তালিকাভুক্ত উপকারভোগীর হাতে ভাতার টাকা পৌঁছে দিতে পারব। তারা সবাই চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে ভাতার টাকা পাবেন।’
সীমিত জনবল নিয়েও আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় প্রতিটি ভাতা কর্মসূচি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। মাঠপর্যায়ে জনবল সংকটের মধ্যেও আমরা গত অর্থবছরে প্রায় ৯০ লাখ জনগোষ্ঠীর ভাতা এজেন্ট ব্যাংক/মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারের (নগদ/বিকাশ) মাধ্যমে প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে