Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুপ্রিম কোর্টে ২ পক্ষের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ আগস্ট ২০২১ ২১:১৪

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাডে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টে পাল্টাপাল্টি মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

রোববার (২৯ আগস্ট) দুপুরে আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা নিজ নিজ দলের পক্ষে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

এ সময় উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মুখোমুখি মিছিল ও স্লোগানে উত্তেজনা তৈরি হয়। এর মধ্যেই দুপুর দেড়টার দিকে আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের কক্ষে বারের সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলন করেন।

আইনজীবী সমিতির প্যাডে লিখিত বক্তব্যে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‌‌‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অসামান্য অবদান একটি মীমাংসিত সত্য। তার মতো একজন বীর সেনানী ও সফল রাষ্ট্রনায়কের চরিত্রে কালিমা লেপনের যে অপচেষ্টা অতি সম্প্রতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে করা হয়েছে, সেটি অত্যন্ত বিভ্রান্তিমূলক এবং ইতিহাসের মীমাংসিত সত্যের বিকৃতি। এ ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্যে সবাইকে আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষকেও ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ বিনির্মাণে শহীদ জিয়ার অবদান চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাডে বিবৃতি দেওয়া প্রসঙ্গে আইনজীবী কাজল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রে জনগুরুত্বপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করার ও মতামত দেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ব্যবহার করে বক্তব্য রাখবে এটাই তো স্বাভাবিক। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেকোনো কমিটি কোরাম হয় ৬ জনে। আমাদের পাশে তো সব সময় ছয় জন সদস্য রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এরপর আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ শফিক উল্লাহের নেতৃত্বে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা সমিতির দক্ষিণ হলে সংবাদ সম্মেলন করেন।

লিখিত বক্তব্যে মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারির বরাত দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসানের সই করা বিবৃতিটি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ও স্বারক ব্যবহার করে জনসম্মুখে সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলের ব্যক্তিগত বক্তব্যকে প্রচার করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পায়তারা করেছে মাত্র। এই বিবৃতি একান্তই তার ব্যক্তিগত বক্তব্য, যা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নয়। কারণ ইতোপূর্বে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি-সম্পাদক থেকে অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। বর্তমানেও অনেকে আছেন। কিন্তু, আইনজীবী নেতারা নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনকে কখনই রাজনৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেননি।

তিনি বলেন, ‘দল-মত নির্বিশেষে নিরপেক্ষতার প্রশ্নে সবসময় তারা ছিলেন বদ্ধপরিকর ও আপোষহীন। অথচ আজ সুপ্রিম কোর্ট বারের প্যাড ব্যবহার করে নিজ রাজনৈতিক দলের মত প্রকাশ করার মতো সস্তা রাজনীতি করে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের দীর্ঘদিনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার চক্রান্ত শুরু হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও জিয়াউর রহমানসহ কিছু ব্যক্তি পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে কনফেডারেশন করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু যখন দেশ গড়ার কাজে ব্যস্ত তখন জিয়াউর রহমান দেশে অরাজক সৃষ্টিকারী গণবাহিনী ও সর্বহারা বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী সৈনিক জিয়া ও মোশতাকের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে।’

বিজ্ঞাপন

জিয়া সামরিক আইন জারি করে বন্দুকের নল দ্বারা ক্ষমতায় প্রতিস্থাপিত হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তী খুনি জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীতে গুপ্ত হত্যা, রাজনীতিবিদদের হত্যাসহ এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই যা করেননি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের বক্তব্য তার দলীয় বক্তব্য যা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বক্তব্য নয়। বরং তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ও স্বারক তাদের হীন দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে বারের ঐতিহ্য ও রীতিনীতি লঙ্ঘনের মতো জঘন্য অপরাধ করেছেন।’

পরে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘শুনেছি পাল্টাপাল্টি স্লোগান হয়েছে। এর মাধ্যমে কাজের পরিবেশ নষ্ট হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত অনেক সদস্য রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এখানে সভাপতি-সম্পাদক হয়ে থাকেন। ইতোপূর্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ব্যবহার করে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া হয়নি। সম্পাদক তার নিজের বক্তব্য দেন। সভাপতি তার নিজের বক্তব্য রাখেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্যাড ব্যবহার করে করে বিবৃতি এটা মনে হয় প্রথম বারের মতো হয়েছে। এতে সুপ্রিম কোর্ট বারে একসঙ্গে কাজ করার যে ঐতিহ্য সেটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আজকে শুনলাম পাল্টাপাল্টি স্লোগান হয়েছে। এর মাধ্যমে পরিবেশটা কিন্তু বিনষ্ট হবে।’

উল্লেখ্য, গতকাল (২৮ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাডে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ’ শীর্ষক শিরোনামে বিবৃতি দেয় আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল। এরপর আজ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি মিছিল ও সমাবেশ করে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এসএসএ

আইনজীবী আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর