বাণিজ্যিক উৎপাদনে ‘কেঁচো সার’, বিষমুক্ত ফসলের প্রতিশ্রুতি
৩০ আগস্ট ২০২১ ০৭:৪১
ঠাকুরগাঁও: উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে কেঁচোর বিষ্ঠা বা মলের ব্যবহার নতুন নয়। এর মাধ্যমে যে জৈব সার তৈরি করা হয়, তার কেতাবি নাম ভার্মি কম্পোস্ট। সেই ভার্মি কম্পোস্টই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়। স্থানীয়ভাবে এর পরিচিতি কেঁচো কম্পোস্ট বা কেঁচো সার হিসেবে। কৃষি কর্মকর্তার দেখানো পথ ধরে এই জৈব সারের বাণিজ্যিক উৎপাদনে যুক্ত প্রায় দুইশ কৃষক লাভের মুখও দেখছেন।
এদিকে, বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে এই জৈব সার বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সে কারণেই প্রান্তিক কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে এই সার ব্যবহার নিয়ে। ঠাকুরগাঁও জেলা তো বটেই, আশপাশের জেলাগুলোতেও এই সারের চাহিদা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে বিষমুক্ত শাক-সবজি তারা উপহার দিতে পারবেন সাধারণ মানুষকে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ২০১৭ সালে ২০টি কংক্রিটের রিং বা চাকতির মধ্যে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তপন মাহামুদ। তাকে দেখেই ধীরে ধীরে উপজেলার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদনে উৎসাহী হয়ে ওঠেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, শাকসবজির ফেলে দেওয়া অংশ, অর্ধ পচা গোবর, কলাগাছ ও কচুরিপানা একসঙ্গে মিশিয়ে সেখানে কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। কেঁচো এসব ময়লা খেয়ে মলত্যাগ করে পচিয়ে ফেলে ও বংশবিস্তার করতে থাকে। কেঁচোর পচিয়ে ফেলা দ্রব্যই মূলত জৈব সারে পরিণত হয়। প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি করা হয় এই সার। অন্যদিকে এই জৈব সার উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কেঁচো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা দরে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিন বছর আগে দুওসুও ইউনিয়নের মহিষমারী গ্রামের হারুন উপজেলা কৃষি অফিস থেকে একটি কংক্রিটের রিং ও ১ কেজি কেঁচো কিনে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ৮০টি কংক্রিটের রিংয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন নিয়মিত।
হারুন বলেন, গত তিন বছরে আমি ৩০ টন কেঁচো সার বিক্রি করেছি। এর আনুমানিক বাজারমূল্য সাড়ে চার লাখ টাকা। বিষমুক্ত ফসলের নিশ্চয়তা তো আছেই, এই কেঁচো সার আর্থিক দিক থেকেও অত্যন্ত লাভজনক হয়ে এসেছে।
কৃষি অফিসের প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় নিজ উদ্যোগে স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক হারুন অর রশিদও এ বছর ১২০টি কংক্রিটের রিং স্থাপন করে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেছেন। তিনি জানালেন, এক মাস পরই এলাকায় শীতকালীন সবজি উৎপাদন শুরু হবে। এসব সবজি উৎপাদনে কেঁচো সারের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তিন টন সার স্টক রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আরও এক টন সার জমা হবে। আশা করা যায়, পুরোটাই শীতের সবজি উৎপাদনকারী কৃষকদের কাছে বিক্রি করতে পারব।
যার হাত ধরে বালিয়াডাঙ্গীতে এই কেঁচো সারের উৎপাদন শুরু, সেই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তপন মাহামুদ সারাবাংলাকে বলেন, কৃষকরা কেঁচো সার উৎপাদন করতে চাইলে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শুধু তাই নয়, তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে। আমাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও আমাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কেউ ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন করতে পারেন। এই সার সবজিকে সম্পূর্ণভাবে বিষমুক্ত রাখবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই সব কৃষকই এই জৈব সার ব্যবহার করুক। যারা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছেন, তারা এ বিষয়ে নিশ্চয় ভূমিকা রাখছেন। তবে আমরা চাই— কৃষক নিজের উৎপাদিত সার নিজে ব্যবহার করবে। সেটি তার জন্য ব্যয়সাশ্রয়ীও হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কেঁচো সারের বিকল্প নেই। এই উপজেলায় এখন জৈব পদ্ধতিতেই সবজি চাষ হচ্ছে। ফলে এই সারের চাহিদা রয়েছে। এই সার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা শক্তিও বাড়ে। বালিয়াডাঙ্গীর কৃষকরা এই সার ব্যবহারের মাধ্যমে উদাহরণ তৈরি করছেন। আমরা চাইব অন্যরাও এই জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করবে। তার জন্য সহায়তা প্রয়োজন হলে আমরা করব।
সারাবাংলা/টিআর
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেঁচো কম্পোস্ট জৈব সার ভার্মি কম্পোস্ট