শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে বৈঠক ৫ সেপ্টেম্বর
১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:০১
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে ফের বৈঠকে বসতে যাচ্ছে এ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। ওই বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলে দেওয়া হতে পারে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার কথা রয়েছে। বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়েরের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর (রোববার) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে ১ সেপ্টেম্বর কোনো বৈঠক হয়নি। এখনও টেকনিক্যাল কমিটির মতামত পাওয়া যায়নি। আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে টেকনিক্যাল কমিটির মতামত পাওয়া যেতে পারে।’ উল্লেখ্য, বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ সংক্রান্ত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি কতটা সহনীয় হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যেতে পারে, খোলার পর শিশুদের স্বাস্থ্যবিধি কী প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করা যেতে পারে- এসব আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সেসব বিষয় নিজ নিজ অবস্থান থেকে তুলে ধরবেন কর্মকর্তারা।
এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে, কীভাবে খুলে দেওয়া যায় সে পরিকল্পনা বছরের শুরু থেকেই করে আসছে সরকার। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না কমায় বার বার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়। সবশেষ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের পাশাপাশি ১৮ বছরের ওপরে সকল শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষককে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে গেছে। বাকিদেরও দ্রুত হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সবধরনের প্রস্তুতি আমাদের নেওয়া আছে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও। এ ব্যাপারে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। সারাবাংলাকে তিনি জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্বশরীরে পাঠদানের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। এখন জাতীয় কমিটি সম্মতি দিলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমের দিকে থাকায় গত ১১ আগস্ট বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। এর পরে দফায় দফায় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হয় যে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, চলতি মাসের যেকোনো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সম্মতি পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর সে ঘোষণা আসতে পারে বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গত দেড় বছরে কোনো পাবলিক পরীক্ষা নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভ্যাকসিন দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। সেখানে ভ্যাকসিন দেওয়া থাকলেও সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর ১২ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ফেসশিল্ড ব্যবহারের করার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ধাপে ধাপে স্বশরীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শতভাগ ভ্যাকসিন নিয়েছেন সেব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম