সাত কলেজের পরীক্ষা ও ফলাফল নিয়ে সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষার্থীরা
২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৩১
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ও ফলাফলসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। মাঝে মাঝে আশার আলো দেখলেও বিভিন্ন কারণে তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টির অভাব ও অবহেলার কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ।
তীব্র সেশনজট, অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল বিপর্যয়, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা ও সাত কলেজ সমন্বয়কারীদের গাফিলতিসহ অন্যতম সমস্যা হলো রেজাল্ট সমন্বয়। শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ম অনুযায়ী আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে ফলাফল পাওয়ার কথা থাকলেও অনার্স চতুর্থ বর্ষ (২০১৫-১৬) সেশনের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬ মাসেও ফলাফল প্রকাশ হয়নি। এছাড়া রেজাল্ট সমন্বয়ের জন্য বিড়ম্বনা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কাওসার হোসাইন সারাবংলাকে বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে পরীক্ষা শুরু হলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সেই পরীক্ষা ২০২১ সালের মার্চ মাসে শেষ হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬ মাসেও ফলাফল না দেওয়া আমাদের প্রতি চরম উদাসীনতা প্রকাশ পাচ্ছে। যেখানে একটা ফলাফল প্রকাশ করার সময় ৯০ দিন, সেখানে ১৮০ দিনেও ফল প্রকাশ হচ্ছে না। কয়েকটা ডিপার্টমেন্টের ফলাফল প্রকাশ হলেও বেশিরভাগ ডিপার্টমেন্টের ফল প্রকাশ হয়নি। একই ব্যাচের কেউ উৎসাহ নিয়ে চাকরির আবেদন করছে আর আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফলাফলের জন্য। এটি খুব দুঃখের ও মানসিক যন্ত্রণার। এই দায়িত্বহীনতা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।
সরকারি তিতুমীর কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জিল্লুর রহমান বলেন, সাত কলেজে পরীক্ষা আর ফলাফল এখন দুটোই মানসিক যন্ত্রণার। যদিও শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে শেষ করেছি ৬ মাস আগে, কিন্তু কোনোভাবেই চিন্তা কমছে না। ফলাফল এখনো প্রকাশ হয়নি। এই দীর্ঘসূত্রতার জন্য চাকরির প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছি না। এছাড়া ভয় আছে- দুই একটা বিষয়ে খারাপ মানে আরও একটি বছর ক্ষতি। আবার রেজাল্ট সমন্বয় করতে আরও এক বছর। এসব সমস্যায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। আর এসব নিয়ে আন্দোলনের ইতিহাস তো আছেই। এই সমস্যাগুলো একবারে নির্মূল করা প্রয়োজন।
ইডেন মহিলা কলেজের ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে পরের বর্ষে পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয়ে ফলাফল সমন্বয়ের জন্য আবেদন করি। কিন্তু এর জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অনেক। কলেজ থেকে বলছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২২ নম্বর রুমে যাওয়ার জন্য। সেখান থেকে বলছে- কলেজ থেকে আবেদনপত্র নেওয়ার জন্য, সঙ্গে দায়িত্বরতদের দুর্ব্যবহার তো আছেই। তাছাড়া সব বিষয়ের রেজাল্ট হলে তবেই রেজাল্টের উন্নতি হয়। আমাদের জোর দাবি, এসব সমস্যা থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়া হোক।
ফারহান খান ঢাকা কলেজের ২০১৩- ২০১৪ শিক্ষার্থী বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে কোনো বিষয়ে খারাপ হলে সেই বিষয়ের ইমপ্রুভ থাকে, যার কারণে ফাইনালে সিজিপিএ আসেনা। এই রেজাল্ট সমন্বয়ের জন্য দৌড়াতে হয় কলেজে থেকে ঢাবির ৩২২ নম্বর রুম পর্যন্ত। আবেদন করে রাখলে কবে রেজাল্ট সমন্বয় হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৪ থেকে ৫ মাস বা তার বেশি সময় নেয় রেজাল্ট সমন্বয়ের জন্য। এই বিলম্ব নিয়ে উত্তর নেই দায়িত্বরতদের কাছে। শিক্ষার্থীদের এসব বিড়ম্বনার দায় কেউ নেয় না। শুধু হতাশা বাড়ায়। তাই এসব সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়া দরকার।
ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়া নিয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, দেখুন এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের কিছু সমস্যাও আছে। যেহেতু শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক তাই একটু চাপ হয়। তাছাড়া কোনো শিক্ষক যদি ইচ্ছে করে খাতা মূল্যায়ন করতে দেরি করে বা নম্বর জমা দিতে দেরি করে সেক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে যা করা উচিত আমরা করব। তবে আমাদেরও কিছু কমতি আছে।
সারাবাংলা/এনএসএম/এনএস