কার্যালয়ে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না: হাইকোর্ট
২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:৪৫
ঢাকা: নেত্রকোনার আটপাড়ায় দুই শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ড দেওয়ার ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, কার্যালয়ে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়ার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার। আর দুই শিশুর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়ে পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, কার্যালয়ে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না। ঘটনাস্থলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং আইন প্রয়োগের ব্যাপারে তাদের আরও সতর্ক হতে হবে।
এর আগে, ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া ভুল স্বীকার করে হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলেও অঙ্গীকার করেন।
দুই শিশুর সাজার দেওয়ার ঘটনায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিল করা লিখিত ব্যাখ্যায় ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া। এর একটি কপি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।
গত ৫ আগস্ট বাল্যবিয়ের ঘটনায় দুই শিশুকে সাজা দেওয়ার বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়ার কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া ব্যাখ্যার এক কপি ২৬ আগস্টের মধ্যে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করতে বলা হয়েছিল। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন।
প্রেমের সম্পর্কের জেরে পারিবারিকভাবে গত ১ আগস্ট নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার শ্রীরামপাশা গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর (১৫ বছর) সঙ্গে সমবয়সী মহেশ্বরখিলা গ্রামের একজনের বিয়ের আয়োজন করা হয়। এই বিয়ের খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের আটক করে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে এক মাস করে সাজা দেন। এরপর তাদের গাজীপুর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ঘটনা নিয়ে গত ৪ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে দুই শিশুকে দণ্ড’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ইমেইলে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। ওই চিঠিতে তাদের মুক্তির নির্দেশনা চাওয়া হয়। চিঠি পাওয়ার পরই গত ৪ আগস্ট শিশু দুটিকে তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম