ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের
৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:২৯
ঢাকা: র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-১৪) হাতে ময়মনসিংহ শহরের খাগড়হর এলাকা থেকে চার জঙ্গি আটক হয়েছে। র্যাবের দাবি, অর্থের যোগান পেতে জঙ্গিরা ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ও স্বর্ণের দোকানেও ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল জঙ্গিরা।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়া শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চার জঙ্গিকে আটক করার পর এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। তারা ময়মনসিংহের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও এমনকি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল।
আটক চার জঙ্গি হলেন ময়মনসিংহের জুলহাস উদ্দিন ওরফে কাদেরী ওরফে মেহেদী (৩৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রোবায়েদ আলম ওরফে ধ্রুত ওরফে রুব (৩৩), ময়মনসিংহের মো. আলাল ওরফে ইসহাক (৪৮) ও রংপুরের আবু আইয়ুব ওরফে খালিদ (৩৬)।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকদের কাছ থেকে তাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। তারা নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ‘এহসার’ সদস্য। এই স্তরের সদস্যরা বিভিন্ন জঙ্গি অপারেশনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকে এবং সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় বলে জানায়। এ বিষয়ে জামালপুরের একটি গোপন আস্তানায় বিশেষ প্রশিক্ষণও নিয়েছে তারা।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানিয়েছে, বাছাইকৃত ১০ থেকে ১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ জঙ্গি দল গঠন করা হয়েছে। এরইমধ্যে তারা ময়মনসিংহের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, স্বর্ণের দোকান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে একটি টার্গেট নির্ধারণ করে। জল ও স্থলপথের সমন্বয় ঘটিয়ে ঘটনাস্থলে আসার পরিকল্পনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনায় নৌকা, মাইক্রোবাস ও বাইক ইত্যাদি ছিল তাদের বাহন। লুট করা টাকা ময়মনসিংহের একটি এলাকায় আরেকটি দলের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা ছিল।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত ৩১ আগস্ট জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার একটি আস্তানায় জঙ্গিরা জড়ো হয়। পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জামালপুরের জামতলা চর এলাকা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে যাত্রা শুরু করে। গোপনীয়তা বজায় রাখতে পথে তারা বিভিন্ন চরে যাত্রা বিরতি করে। এরপর শনিবার ভোররাতে একই পথে তারা ময়মনসিংহের খাগডহর এলাকায় পৌঁছায়।
তবে তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায় র্যাবের তৎপরতায়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্রহ্মপুত্র নদে একটি নৌকায় জঙ্গিদের অবস্থানের কথা জানতে পেরে র্যাব-১৪ এর একটি দল শহরের খাগডহর এলাকায় অভিযানে যায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় র্যাব সদস্যরাও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে।
কিছুক্ষণ গুলি বিনিময়ের পর ঘটনাস্থল থেকে ওই চারজনকে আটক করে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, আটটি বোমা সদৃশ্য বস্তু, চারটি ব্যাগ, দরজা ও লক ব্রেকিং বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
আটকদের বর্ণনা অনুযায়ী ডাকাতির নেতৃত্বে ছিল জঙ্গি জুলহাস। তার নেতৃত্বে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালনের পরিকল্পনা ছিল। দলের সদস্যদের ওয়াচম্যান, হাউস ও লক ব্রেকিং, নিরাপত্তা প্রদান এবং লুটপাটসহ বিভিন্ন দায়িত্ব বণ্টন ও বিভাজন করে দেওয়া হয়। আর সিটিটিভি ও তথ্য প্রযুক্তির বিষয়াদি দেখভাল করার দায়িত্বে ছিল জঙ্গি রোবায়েদ।
সারাবাংলা/ইউজে/একে