নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের দুই মাস পর কারখানার ভেতরে থেকে আরও তিনটি মরদেহের হাড়গোড় উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হাড়গোড়গুলো ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকা মেডিকের কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিআইডি’র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ আগুনে পুড়ে যাওয়া কারখানার ছয় তলা ভবনের প্রতিটি তলায় তল্লাশি অভিযান চালায়। এ সময় ভবনের চতুর্থ তলার একটি স্থান থেকে তিনটি মরদেহের মাথার খুলি, হাড় ও মাথার চুল উদ্ধার করা হয়েছে।
সিআইডি নারায়ণগঞ্জ জোনের পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে তল্লাশি অভিযানে হাড়ের অংশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে জানা যাবে, সেগুলো নিখোঁজ কোনো শ্রমিকের মরদেহের অংশবিশেষ কি না।
গত জুলাইয়ে ওই কারখানায় আগুন লাগার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন কারখানার শ্রমিক মহিউদ্দিন, সাজ্জাদ ও লাবনী। স্বজনরা তাদের সন্ধান চেয়ে কয়েকদিন আগে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কাছে একটি আবেদন করেন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কাছেও এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা ভবনটিতে ফের তল্লাশি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সিআইডি’র সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানান, কয়েকদিন আগে নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধান চেয়ে স্বজনরা আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় নিচ তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত গোটা ভবন তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিতে ভবনের চতুর্থ তলা থেকে তিনটি হাড়ের অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া হাড় ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গত ৮ জুলাই সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডসের ওই কারখানায় আগুন লাগে। ডেমরা, কাঞ্চন, সিদ্ধিরগঞ্জ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৮টি ইউনিট মিলেও সারারাতে সে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। কারখানায় দুই দিক থেকেই তালাবন্ধ চতুর্থ তলা থেকে উদ্ধার করা হয় ৪৯টি মরদেহ, যার কোনোটিই দেখে চেনার কোনো উপায় ছিল না। কয়েকটি মরদেহের ক্ষেত্রে পুরো শরীরও পাওয়া যায়নি। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া মরদেহগুলো শনাক্ত করার কোনো উপায়ই ছিল না।
৯ জুলাই মরদেহগুলো নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে। পরে দেখা যায়, দুইটি ব্যাগে থাকা মরদেহের অংশগুলো মূলত একই ব্যক্তির। সে হিসাবে ৪৮টি মরদেহের স্বজনদের খুঁজতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয় ওই কারখানায় নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ৪৫টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এর মধ্যে ২৪টি হস্তান্তর করা হয় গত ৫ আগস্ট। পরে ৭ আগস্ট হস্তান্তর করা হয় বাকি ২১টি মরদেহ।
ফাইল ছবি
আরও পড়ুন-
- আগুনপাখির ডানায় ডানায় মৃত্যু [ছবি]
- হাসেম ফুডস ফ্যাক্টরিতে আগুন, ২ শ্রমিকের মৃত্যু
- হাসেম ফুডস কারখানার তালাবদ্ধ ৪র্থ তলায় ৪৯ মরদেহ
- হাসেম ফুডস কারখানায় আগুন, আরও এক শ্রমিকের মৃত্যু
- ১৬ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি হাসেম ফুডস কারখানার আগুন
- নিচের সিঁড়িতে আগুন, ছাদের সিঁড়ি তালাবন্ধ— পুড়ে কয়লা ৪৯ শ্রমিক
- হাসেম ফুডসে আগুন: বিল্ডিং কোড মানা হয়নি, ছিল অতিরিক্ত কেমিক্যাল
- হাসেম ফুডস কারখানায় আগুন: ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি ফায়ার সার্ভিসের