চট্টগ্রাম ব্যুরো : নোয়াখালীর ভাসানচরে সরকারি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা শিশুসহ ১৯ রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আটক হয়েছে। তাদের আবারও ভাসানচরে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর সলিমপুর ঝুনা মার্কেটের সামনে সাগরপাড় থেকে তাদের আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারা ভাসানচর ক্যাম্প থেকে গোপনে বেরিয়ে ট্রলারে উঠেছিল কক্সবাজার যাওয়ার জন্য। ট্রলার সীতাকুণ্ড পর্যন্ত আসার পর তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়। উত্তর সলিমপুরে সাগর উপকূলে তাদের দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। এরপর আমরা তাদের আটক করে নিয়ে আসি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা তাদের আবারও ভাসানচরে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটা নোয়াখালী জেলা পুলিশ সিদ্ধান্ত নেবে।’
আটক ১৯ জনের মধ্যে আটজন পুরুষ, চারজন নারী ও সাতজন শিশু বলে জানিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক সুমন বণিক।
সীতাকুণ্ডে প্রথমবার ভাসানচর থেকে পালানো রোহিঙ্গা ধরা পড়লেও মীরসরাই এবং সন্দ্বীপে কয়েক দফায় এ পর্যন্ত কয়েক’শ রোহিঙ্গা আটক হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট রাতে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে ৪০ জন রোহিঙ্গা নিয়ে সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় বঙ্গোপসাগরের মোহনায় একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে যায়। তাদের মধ্যে ১৪ জন রোহিঙ্গা জেলেদের নৌকায় করে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরে যায়। এরপর বেশ কয়েকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও বান্দরবানের তমব্রু সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা প্রবেশ শুরু করেন। সেসময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। গত তিন দশকে আসা নতুন-পুরনো মিলিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস।
কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ দিতে নৌবাহিনী নোয়াখালীর ভাসানচর দ্বীপে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে। সেখানে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, খেলার মাঠ, হাসপাতালসহ প্রায় এক লাখ মানুষের নিরাপদে থাকার সব ব্যবস্থা আছে বলে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
গত ৪ ডিসেম্বর থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া শুরু হয়। কয়েক দফায় ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে গিয়েছিলেন। তবে এরমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে ভাসানচর থেকে ফের কক্সবাজারে পৌঁছেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।