Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

থাকছে আইসোলেশন সেন্টার, কোভিড বাজেটের তথ্য অস্বীকার ভিসি’র

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:০২

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেই আসছে অক্টোবর মাসে খুলতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রস্তুতি হিসেবেই হলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের উপযোগী সংস্কার কাজের পাশাপাশি চিকিৎসাকেন্দ্রেও চলছে কাজ। ২৫ শয্যার একটি আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য। জিমনেশিয়ামের মাঠে আরও ২৫ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার তৈরির প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটেও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত চিকিৎসা খাতে রাখা হয়েছে বিশেষ বরাদ্দ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, কোভিড-১৯ চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে আলাদা করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন কোটি টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলছেন, উপাচার্যের নির্দেশনাতেই এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে এমন কোনো অর্থ বরাদ্দই হয়নি বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান!

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ সাপেক্ষে আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে হলে ফেরার পর কোনো শিক্ষার্থীর শরীরে করোনার সংক্রমণ ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিক্যাল সেন্টারে আইসোলেশনের ব্যবস্থা রাখছে কর্তৃপক্ষ।

প্রথম পর্ব: হল খোলার প্রস্তুতি— চলছে সংস্কার কাজ, থাকছে আলাদা নীতিমালা

আইসোলেশন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের তৃতীয় তলায় ২৫টি বেড বসানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সারওয়ার জাহান মুক্তাফী। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের গেস্ট রুমগুলোতে আরও ২৫টি বেড স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

ডা. মুক্তাফী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইসোলেশনের জন্য সব ফ্লোরই কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। এক্ষেত্রে তৃতীয় তলায় ২৫টি বেড স্থাপন করে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করছি। ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হবে দ্বিতীয় তলায়। তবে প্রয়োজনসাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের গেস্ট রুমে আরও ২৫টি বেড স্থাপন করে সেখানেও আইসোলেশনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে।’

আইসোলেশনের ব্যবস্থা ছাড়া অবশ্য কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য অন্য কোনো সুবিধাই থাকছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে। জরুরি অবস্থা বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে পাঠাবে কর্তৃপক্ষ।

ডা. মুক্তাফী বলেন, ‘সব হাসপাতাল তো কোভিডের চিকিৎসা করতে পারে না। সরকার অনুমোদিত ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোই কেবল এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে পারে। সেক্ষেত্রে জরুরি কোনো অবস্থা দেখা গেলে শিক্ষার্থীদের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালেই পাঠানো হবে।’

২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের অ্যালোপ্যাথিক-হোমিও ওষুধপত্র, এক্সরে, ডেন্টাল ও প্যাথলজিকাল মালামাল কেনাকাটা সংক্রান্ত খরচ বাবদ বরাদ্দ অর্থের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। আগের অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১০ লাখ টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে বাড়িয়ে ১৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কোভিড-১৯-এর পরীক্ষা ও চিকিৎসাসহ কোয়ারেনটাইনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি টাকা

এদিকে, ঢাবি’র চলতি অর্থবছরের বাজেটে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত চিকিৎসা খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখা হলেও সেটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে বিপরীতমুখী তথ্য। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রতিবেদনের ১৩০ নম্বর পৃষ্ঠায় চিকিৎসা ব্যয় সংক্রান্ত বরাদ্দের উল্লেখ আছে। এই অংশের ৬, ৭ ও ৮ নম্বর খাতে দেখানো হয়েছে— মহামারি করোনা বিবেচনায় চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য বাজেটে অতিরিক্ত তিন কোটি টাকা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোয়ারেনটাইন সুবিধা বাবদ এক কোটি টাকা এবং কোভিড পরীক্ষা সংক্রান্ত খরচ বাবদ এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটে। এ ছাড়া কোভিড চিকিৎসা বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে আরও এক কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অবশ্য উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অত টাকা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। এই পরিমাণ টাকা তো থাকার কথা না!’

পরে এই প্রতিবেদক বাজেট প্রতিবেদন থেকে এই অংশটুকু মোবাইল ফোনে পড়ে শোনালে উপাচার্য বলেন, ‘যদি থেকে থাকে, তবে আমার মনে হয় ভুল আছে।’

উপাচার্যের এমন বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। তার দাবি— উপাচার্যের নির্দেশনা অনুযায়ীই ওই তিন কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে।

অধ্যাপক মমতাজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘অর্থ তো বরাদ্দ রাখা হয়েছেই। আমি জানি না, এই বরাদ্দ দিয়ে কতটুকু কাজ করা যাবে। হয়তো ঘাটতি থাকবে। কিন্তু বরাদ্দ তো রাখতেই হয়।’

বরাদ্দ দেওয়া এই অর্থের বিষয়ে উপাচার্যের বক্তব্য জানালে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘যদি বলে থাকেন, এটি ঠিক না। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না।’

সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর

আইসোলেশন সেন্টার কোভিড-১৯ বাজেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবি চিকিৎসাকেন্দ্র হল খোলার প্রস্তুতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর