Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের ব্যয় বেড়ে আড়াই গুণ, বাড়ছে মেয়াদও

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:২৫

ফাইল ছবি

ঢাকা: খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এবারে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আরও ৪৫৯ কেটি ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে প্রকল্পটিতে। তাতে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রথম প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় বর্তমান প্রাক্কলিত ব্যয় হয়েছে আড়াই গুণ।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের মধ্যে ভারতীয় ঋণ থেকে ব্যয় করা হচ্ছে ২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। ‘খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের বাকি টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার। তবে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনীতে কেবল ব্যয় নয়, বাড়ছে মেয়াদও। নতুন করে দেড় বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পটির। এরই মধ্যে প্রকল্পটির এই সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে দ্বিতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৯ জুন অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে তার মধ্যে রয়েছে— খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত পথটি ৬৪ দশমিক ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ রেললাইনে সংযুক্ত হবে। এর মাধ্যমে মোংলা সমুদ্র বন্দরকে বিদ্যমান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে। রেলযোগে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নও ঘটবে।

রেলপথ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আরও বলছে, রেললাইনে সংযুক্ত হলে মোংলা সমুদ্রবন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বাড়বে। পাশপাশি মোংলা থেকে তেলবাহী ওয়াগন সারাদেশে চলাচলের ব্যবস্থা করা যাবে। পর্যটকদের মোংলা বন্দর পর্যন্ত নিরাপদ ও আরামদায়ক রেলওয়ে পরিবহন সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুবিধা তৈরি হবে। এসবের মাধ্যমে রেলওয়ের মোডাল শেয়ার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে প্রকল্পের আওতাভুক্ত নির্মাণ কাজের দরপত্রের মূল্যবৃদ্ধি ও সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ওয়ার্কসের ব্যয়বৃদ্ধির কথা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ, সিডি ভ্যাট, যানবাহন ভাড়া, পুনর্বাসন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ব্যয় কমলেও সুপারভিশন পরামর্শক খাতে ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটে জনবল ও অন্যান্য খাতে ব্যয় বাড়বে। পরামর্শকের আইটি ও ভ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং লেজিসলেটিভ পরিবর্তন, নিয়োগ ও অনুষ্ঠান ব্যয় নতুন অঙ্গ হিসেবে প্রকল্পটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণেও প্রকল্পটি সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। সব মিলিয়েবাস্তবতার নিরিখে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর কারণে সার্বিকভাবে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর রফতানি ও আমদানি মালামালের সিংহভাগ পরিচালনা করছে। চট্টগ্রাম বন্দরে জট নিরসন ও দেশের অভ্যন্তরে উন্নয়নের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মোংলা সমুদ্র বন্দরকেও উন্নত করা প্রয়োজন। কন্টেইনার ও বাল্ক কার্গো পরিবহনের জন্য মোংলা বন্দরকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন।

মূল প্রকল্পটি ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন পায় একনেকে। লক্ষ্য ছিল, ২০১৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের। পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছর বাড়িয়ে নেয়। এরপর মোট ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য দিয়ে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। পরে প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) ব্যয় বাড়ানো ছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ প্রথমবার ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় বার চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্পের আওতায় রূপসা ব্রিজসহ অন্যান্য ব্রিজের পাইলের দৈর্ঘ্য বাড়ানো, সেতুর উচ্চতা বাড়ানো, সেতুর অ্যাপ্রোচের ফরমশেন লেভেল বৃদ্ধি, নরম মাটি অপসারণ, ভবন ও প্ল্যাটফর্ম লেভেলের উচ্চতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটির আওতায় খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫০ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে মোংলা সমুদ্রবন্দরকে বিদ্যমান রেলওয়ে নেটয়ার্কেও সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়া রেলযোগে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ বাড়ছে মেয়াদও ব্যয় বেড়ে আড়াই গুণ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কোস্ট গার্ডের নতুন ডিজি জিয়াউল হক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩২

সম্পর্কিত খবর