নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন শহরে সন্ত্রাসী হামলার ২০তম বার্ষিকীতে শোক পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের (৯/১১) এই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। যা ২১ শতককের ভূ-রাজনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে পৃথক তিনটি স্থানে ৯/১১ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাক্ষাৎ করবেন। এটি জাতীয় ঐক্যের বিরল ঘটনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করেছেন তিনি। যদিও আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে সেনা প্রত্যাহার করার ঘটনায় মার্কিদের ক্ষোভ এখনো কাঁচা।
দুই দশক পরে ৯/১১’র ঘটনার স্মৃতি এখনো অনেকের পরিষ্কার মনে আছে- সবাই মনে করতে পারে ওই সময় তারা কোথায় ছিল। যা নৃশংস ঘটনার পর জন্ম নেওয়া প্রজন্মের কাছ শুধুই একটি ঐতিহাসিক ঘটনা মাত্র।
যা ঘটেছিল ওই দিন:
২০০১ সালের ১১ সেপ্টম্বর সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়দার সদস্যরা চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে। এর মধ্যে দুটি বিমান নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিধ্বস্ত করে। যা মার্কিনিদের অর্থনৈতিক শক্তির প্রতীক।
এই বিস্ফোরণে সারাবিশ্ব থেকে যাওয়া মানুষ সেখানে নিহত হয়। এর মধ্যে অনেকে জীবন বাঁচাতে ঝাঁপ দেওয়ায় এবং টুইন টাওয়ার ভেঙে পড়ে যাওয়ার কারণে তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনা সরাসরি টেলিভিশনে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন দর্শকরা।
ছিনতাইকারীরা ওয়াশিংটনের কাছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদরদফতর পেন্টাগনে ঢুকে পড়ে এবং পাশের একটি গর্তে আছড়ে পড়ে। আর চতুর্থ বিমানটি যুক্তরাজ্যের রাজধানীর দিকে যাচ্ছিল। যা যাত্রীদের প্রতিরোধের কারণে পেনসিলভেনিয়ার একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছিল।
এ ঘটনায় দুই হাজার ৯৭৭ জন নিহত হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ৭৫৩ জন ঘটনাস্থলেই মারা নিহত হয়। যা ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালে পার্ল হারবারে জাপানের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যার চেয়েও বেশি।
যেসব অনুষ্ঠান থাকছে আজ:
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফাস্ট লেডি জেলি বাইডেন পৃথক তিনটি স্থানে ৯/১১ নিহতের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ৮টা ৩০ মিনিটের অনুষ্ঠানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামারও যোগ দিবেন। ২০১১ সালে ওবামার শাসনকালে আল-কায়দার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন সেনাবাহিনী।
বাইডেন পেন্টাগনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার আগে শনিবার বিকালে শ্যাঙ্কসভিলে যাবেন। এদিকে আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে উদ্ধার অভিযান শেষ করার কারণে কংগ্রেসের তদন্তের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন তিনি। গত দুই সপ্তাহ আগে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধের অবসান হয়।
এ পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে আবারও তালেবান ক্ষমতায় এসেছে। যেমনটা ৯/১১’র সময়ে ছিল। এতে করে দেশটি আবারও সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ২০০১ সালে এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে। তিনি শ্যাঙ্কসভিলে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় একটি স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখবেন। সেখানে ওই চারটি বিমানে থাকা যাত্রী, ক্রু ও পাইলটদের নাম পড়ে শোনানো হবে ও শ্রদ্ধা জানানো হবে। যারা সবাই ওই হামলায় নিহত হয়েছিলেন।
বাইডেন অনুষ্ঠান শেষ করে নিউইয়র্ক শহর ত্যাগ করার পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯/১১ হামলায় নিহতদের জন্য নির্মিত স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করবেন।