Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজ খুলছে বিদ্যালয়ের দ্বার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০০:০১

ক্লাসরুমও সাজানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য

ঢাকা: প্রায় দেড় বছরের অপেক্ষা। সুনির্দিষ্টভাবে বললে ১৭ মাস ২৪ দিন। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে ৫৪৩ দিনের বিরতিতে আটকে গিয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই খুলছে স্কুল-কলেজের দুয়ার। শ্রেণিকক্ষে আসতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই দেড় বছর পর খুলছে দেশের সব স্কুল-কলেজ। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা থেকে শুরুতে স্কুল-কলেজে ছুটি দেওয়া হয়েছিল ১৪ দিনের জন্য। তখনো কেউ ভাবেনি এই ছুটি দেড় বছর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের বন্ধের রেকর্ড।

বিজ্ঞাপন

স্কুল-কলেজ খোলার জন্য কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীরা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসতে পারে, সেভাবেই আসন ব্যবস্থাপনা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ভিড় বা জমায়েত এড়াতে স্কুল-কলেজে অ্যাসেম্বলিও আপাতত না করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্কুল-কলেজে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। বিদ্যালয়ে ঢোকা ও বের হওয়ার আলাদা রাস্তা রাখতেও বলা হয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।

শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি স্কুল ঘুর দেখা গেছে, বেশিরভাগ স্কুলই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে। ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে শ্রেণিকক্ষ। সাজানো হয়েছে নতুন করে। স্কুল ক্যাম্পাসও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। হাত ধোয়ার জন্য বসানো হয়েছে বেসিন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে শ্রেণিক্ষে বসার জন্য এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরেও দাঁড়ানোর জন্য দূরত্ব রেখে স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আজিমপুরের অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে আইসোলেশন সেন্টারও করা হয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হবে সেখানেই। এরকম সুবিধা রাখা হয়েছে আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

বিজ্ঞাপন

রোববার স্কুল-কলেজ ক্লাস শুরু হলেও অবশ্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো বন্ধই রয়েছে, যেগুলো হয়তো আগামী মাসখানেকের মধ্যে খুলে যাবে।

আরও পড়ুন-

এদিকে, স্কুল-কলেজ খুললেও সব শ্রেণিতে পাঠদান অবশ্য শুরু হচ্ছে না আজই। চলতি ও পরবর্তী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা আপাতত প্রতিদিন ক্লাস করবে। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর অপেক্ষায় থাকা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও ক্লাস করবে প্রতিদিন। বাকিরা সপ্তাহে এক দিন করে ক্লাস করবে। একইসঙ্গে চলবে অনলাইন ও টেলিভিশন ক্লাসও।

দেড় বছর পর স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস কাজ করছে। দীর্ঘ বিরতির পর স্কুলে শিক্ষার্থীরা আসবে, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হবে, শিশুদের কলকাকলিতে প্রাণ ফিরবে স্কুল ক্যাম্পাসে— এ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন শিক্ষকরা। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষরাও জানালেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরাতে উন্মুখ হয়ে আছেন তারা।

তবে অভিভাবকদের অনেকেই এই মহামারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। তারা বলছেন, স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে প্রতিপালন করা যাবে কি না, তা নিয়ে তারা সন্দিহান। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে গিয়ে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনেও এ উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের বরণে প্রস্তুত শ্রেণিকক্ষ

তবে শিক্ষার্থীরা স্কুলে ফেরার সুযোগ পেয়ে যথেষ্টই খুশি। দীর্ঘ সময় ধরে বাসায় ‘বন্দি’ থাকার পর স্কুলে গিয়ে শিক্ষক আর বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ পাবে— করোনা সংক্রমণের উদ্বেগের মধ্যেও এটি তাদের উৎসাহের মূল কারণ। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থী যারা, তারা স্কুল খোলার সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে ধারণা করে স্বস্তি বোধ করছে।

এর আগে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এরপর ১ সেপ্টেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘরে থাকতে থাকতে শিশুদেরও যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছে। সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া দরকার।

পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে মত দেওয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিকল্প নেই— এটিও বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে পরামর্শক কমিটি।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় মশক নিধনের ওষুধও স্প্রে করা হচ্ছে স্কুলে

এরপর গত ৩ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। মন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার জন্য আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে ১২ সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এরপর গত এক সপ্তাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নানা ধরনের নির্দেশনা দিয়ে গেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (মাউশি)। শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে স্কুল-কলেজে ফিরতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে অবশ্য শুক্রবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শনিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ-ও জানিয়েছেন, দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লে ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে রেখেছেন।

সারাবাংলা/টিএস/টিআর

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর