নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে লং মার্চের ঘোষণা দিলো ঐক্য মোর্চা
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:৪৪
ঢাকা: সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার পূরণের আহ্বান জানিয়েছে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের ঐক্য মোর্চা। এ লক্ষ্যে আগামী নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান এবং আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে লং মার্চ করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে পধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের ঐক্য মোর্চার প্রধান সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য মোর্চার বিভিন্ন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আগামী নভেম্বরে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। পরবর্তী আমাদের কর্মসূচি আছে। আমরা আগামী নভেম্বর মাসে এটা করব। আগামী বছর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশ থেকে লং মার্চ করে ঢাকায় আসব। ঢাকায় এসে জমায়েত হয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা করে আবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেব যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কথা। এটিই হচ্ছে আমাদের লড়াই। আমাদের লড়াই নিয়মতান্ত্রিক, এই লড়াই গণতান্ত্রিক।’
লিখিত বক্তব্যে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সংখ্যালঘু জনজীবনে বিরাজিত বহুমুখী সংকট থেকে উত্তরণে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বেশ কয়েকটি অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছিল।’
নির্বাচনী ইশতেহারের সেই অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো এখানে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।
সরকারের কাছে আমাদের দাবি, অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। অনতিবিলম্বে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করতে হবে।
অনতিবিলম্বে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হল, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইবুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় কোন বাধা ও বিলম্ব ছাড়াই আইনে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়নের জরুরি নির্দেশনা জারি করতে হবে। ভুক্তভোগীদের পক্ষে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রদত্ত রায় ও ডিক্রি আইনে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। ২০১৩ সালে বাতিলকৃত খ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির খাজনা নেয়ার ক্ষেত্রে তহসিল অফিসের অস্বীকৃতি এবং এসিল্যান্ড অফিসের অহেতুক গড়িমসি ও দুর্নীতি বন্ধেরও নির্দেশনা প্রদান করার দাবি করেন।
জাতীয় পর্যায়ে এবং প্রতিটি জেলায় ভূমি প্রশাসন, সরকারি আইনজীবী, ভুক্তভোগী জনপ্রতিনিধি এবং ভুক্তভোগী আইনজীবী প্রতিনিধির সমন্বয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নের নিয়মিত পরিবীক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের (যেমন-সাঁওতাল, গারো, হাজং, মুন্ডা, ওরাও মনিপুরী, খাসিয়া ইত্যাদি) ভূমি রক্ষায় স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠন এবং রাষ্ট্রীয় প্রজাস্বত্ব আইনের ১৭ ধারা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ জারি করতে হবে।
জাতিসংঘ এসডিজির মূল সুর নির্ধারণ করেছে, কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সবাইকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এসেও আমরা এ দেশের ধর্মীয়-জাতিগত- আদিবাসী সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আজও একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করছি। তাই আসুন সকল নাগরিককে সাথে নিয়েই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সামিল হই।
সারাবাংলা/এনআর/একে