৭০০ একর সংরক্ষিত বনভূমি প্রশাসন একাডেমির জন্য বরাদ্দে উদ্বেগ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:৩৯
কক্সবাজারের হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের ৭০০ একর সংরক্ষিত বনভূমি প্রশাসন একাডেমির জন্য বরাদ্দে উদ্বেগ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস বিভাগ এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন (IAA)।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন ও সভাপতি শেখ মুহাম্মদ বেলাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস বিভাগ এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন (IAA) অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, কক্সবাজারের ঝিলংজায় হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভুক্ত পরিবেশগত সংকটাপন্ন ৭০০ একর গেজেটভুক্ত রক্ষিত বনভূমি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ একাডেমির ভবন নির্মাণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন অধিদপ্তর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মতামত উপেক্ষা করে প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য অকৃষি ও খাস জমি দেখিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় এই বনভূমি বরাদ্দ দেওয়া ও নেওয়া উভয় কর্মকাণ্ডই দেশের বিদ্যমান জাতীয় বন নীতি ১৯৯৪, বন আইন ১৯২৭, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৬ সহ পরিবেশগত বিভিন্ন বিধিমালার পরিপন্থী এবং এ ধরণের কাজে বনভূমি ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই।
তারা বলেন, এমন এক সময়ে এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যখন প্রধানমন্ত্রী Climate Vulnerable Forum (CVF)-এর সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে Mujib Climate Priority Plan-এর মতো উদ্ভাবনী পরিকল্পনার মাধ্যমে সারা বিশ্বকে এই জাতীয় বন ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা থেকে বিরত রাখার জন্য নেতৃত্ব প্রদান করছেন। এ ধরণের কর্মকাণ্ড কেবলমাত্র কক্সবাজার এলাকার বন ও জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলবে না, পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন CoP-26 বৈশ্বিক সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিড়ম্বনার মুখে ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
কক্সবাজার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা একসময় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী বিশেষ করে হাতির আবাসস্থল হিসেবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এছাড়াও এ বনভূমি সাইক্লোনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের জানমাল রক্ষায় অশেষ অবদান রাখে। কিন্তু রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মানবিক ও কৌশলগত কারণে ইতোমধ্যে সরকারকে কক্সবাজার জেলার ছয় হাজার একরের অধিক বনভূমি বন বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের অনুমতি দিতে হয়েছে। এখন প্রশিক্ষণ একাডেমির ভবন নির্মাণের নামে ৭০০ একর বনভূমি বরাদ্দ দেওয়া হলে তা নিশ্চিতভাবে পরিবেশগত মহা বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে তাদের আশংকা। একইভাবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের নামে আরও বনভূমি ধ্বংসে উদ্বুদ্ধ হবে। ফলে বনভূমি ও পরিবেশ রক্ষা করা দুরূহ হয়ে পড়বে বলেও মনে করেন তারা।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী একটি দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় নূন্যতম ২৫ ভাগ বনভূমি প্রয়োজন হলেও আমাদের দেশে আছে ১০ ভাগেরও নীচে। তাই তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে দেশের এই সীমিত বনভূমি ধ্বংস হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থেকে দেশের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আহ্বান জানান।
সারাবাংলা/আরএফ/