আমনের ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা কৃষক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০০:১০
ঠাকুরগাঁও: জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় ইঁদুরের উৎপাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। ক্ষেতের কাঁচা ধানের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে ইঁদুর। গত বোরো মৌসুমে ধানের দাম না পেয়ে অনেক কৃষককে লোকসান গুণতে হয়েছে, সেই লোকসানের হিসেব মাথায় নিয়ে আমন চাষাবাদে নেমেছেন তারা। কিন্তু আমন ধান ক্ষেতে ব্যাপকভাবে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দেওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের।
রাণীশংকৈল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, আমনের আবাদ গতবারের তুলনায় এবার বেশি হয়েছে। এবার উপজেলায় ২১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমন ধানের ক্ষেতগুলো কেউ যেন ধারালো কাঁচি দিয়ে কেটে দিয়েছে। অনেক কৃষক ইঁদুর মারার জন্য ওষুধ ব্যবহার করেও ফল পাচ্ছেন না। এবছর মাঠের ধান ভালো হলেও ইঁদুরের উৎপাতের কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলার পকম্বা গ্রামের এমাজউদ্দীন, রাতোর গ্রামের আব্দুল কাদের, ভরনিয়া গ্রামের আলামিন, লেহেম্বা গ্রামের নজরুল ইসলাম, বাজেবকসা গ্রামের রাজন মিয়া, মতিন মিয়াসহ বেশ কিছু কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টির অভাবে ধান রোপণে কিছুটা সমস্যা হলেও মৌসুমের শেষের দিকে এসে বৃষ্টি হওয়ায় ও কৃষকদের চেষ্টায় কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছেন তারা। সবুজে ভরে উঠছে পুরো মাঠ।
এমন সময় ক্ষেতের কাঁচা ধানে ইঁদুরের আক্রমণে যেন কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে। কাঁচা ধানের গাছ ইঁদুর কেটে দেওয়ায় নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন তারা। ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক। কৃষকরা ক্ষেতে বিষমাখা বিভিন্ন পদ্ধতিতে টোপ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।
তবে কীটনাশক প্রয়োগ করে ইঁদুরের উপদ্রব্য কমাতে না পেরে ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে সনাতন পদ্ধতিতে বাড়িতে বসে বাঁশের তৈরি ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে ফসল রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কৃষক।
দেখা গেছে, আমন ধানের ক্ষেতে শুকনো স্থানের চেয়ে পানি জমা ফসলের ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি। ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাঁশের তৈরি ইঁদুর মারার ফাঁদ বসিয়েছেন।
ভন্ডগাঁও কৃষক কবীর বলেন, ‘এই বছর ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। আমার ৩.৫ বিঘা ধানের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতক ধান কেটে সাবাড় করে ফেলেছে ইঁদুর। তাই নিরুপায় হয়ে বাড়িতে নিজে বাঁশ দিয়ে ফাঁদ তৈরি করে ক্ষেতে রেখেছি। কিছুটা হলেও কাজ হচ্ছে, ১বিঘা জমিতে ফাঁদে এখন পর্যন্ত আটকা পড়েছে ১৮টি ইঁদুর। বাঁশের ফাঁদ বসিয়ে প্রতিরাতে ২/৩টা করে ইঁদুর মারছি। তবুও ইঁদুরের অত্যাচার কোনোভাবেই কমছে না।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘উপজেলা কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে ইঁদুর নিধনে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশীয় পদ্ধতিতে ইঁদুর মারার ফাঁদ, গর্তে পানি ভরে ইঁদুর তাড়ানোসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই এর সমান হয়ে যাবে।’
সারাবাংলা/এমও