পটুয়াখালী: সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে জেলা ওয়াকফ পরিদর্শকের কার্যালয়। জেলার কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের চার কোটি ৮৪ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এই তদন্ত শুরু হয়।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) জেলা ওয়াকফ পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক শাহিন স্বাক্ষরিত নোটিশে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই অভিযোগে বলা হয়, খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ ১৯২১ সালে নির্মিত হয়। খেপুপাড়া মৌজা, ৬ নং জেএল, এসএ খতিয়ান নং ৪০৯, যার দাগ নং ১৭৯, ৬৪০’সহ একাধিক দাগে ২১ দশমিক ৯৬ একর জমি মসজিদের নামে রেকর্ড রয়েছে। ২০১১ সালে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ (আ’লীগ সহ-সভাপতি), সাধারণ সম্পাদক এসএম রাকিবুল আহসান (আ’লীগ সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান), ক্যাশিয়ার মীর আবদুল বারেক (আ’লীগ নেতা) মসজিদের জমি হতে দুই কোটি টাকার জমি সাব-কবলা দলিল মূলে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। এরপর ২০১৩ সালে ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ২০১৭ সালে অবৈধভাবে উল্লেখিত কমিটির তিনজন তিনটি সাব-কবলা দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি করে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই ৩টি দলিলের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে মসজিদের জমি ক্রয় করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান, মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব বিলকিস জাহান ও তার স্বামী মো. ইউসুফ আলী। অবৈধভাবে ক্রয় করা মসজিদের জমির বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ১০ কোটি টাকা। এছাড়া মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসুল্লিদের দেওয়া দানের ৮৪ লাখ টাকা কমিটির তিনজন মসজিদ ফান্ড থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
মসজিদের একাধিক মুসুল্লি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মসজিদের নতুন ভবন, ঈদগাহ মাঠ, ইমাম, মুয়াজ্জিনের কোয়ার্টার ও অজুখানা নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ ও স্থানীয় মুসুল্লিদের অনুদান পায়। এরপরও কমিটির অভিযুক্ত তিনজন মসজিদের তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করে নির্মাণ কাজে খরচ করেন। পুরাতন ভবন ও অন্যান্য ঘর বেশি টাকা নিলামে বিক্রি করে মসজিদে কম টাকা জমা দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও মুসুল্লিদের দান ও অনুদানের সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়নি। মসজিদ পুকুরের মাছ বিক্রি করে তারা তহবিলে জমা দেননি। এমনকি উল্লিখিত মসজিদ কমিটির তিনজন দায়িত্বে থাকাকালীন মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাবও বর্তমান কমিটিকে দেয়নি।
এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সাবেক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, ইমাম, মুয়াজ্জিন কোয়ার্টার নির্মাণ করেছি ৮-১০ বছর আগে। ১১ কানি জমি ক্রয় করেছি। একটা জমি নিয়ে একটু সমস্যা আছে। যা বর্তমান কমিটি চেষ্টা করলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমাধান করতে পারবে।’
খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউএনও আবু হাসনাত মোহম্মদ শহিদুল হক বলেন, জেলা প্রশাসককের নির্দেশে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। জেলা ওয়াকফ পরিদর্শক অভিযোগের তদন্ত করছেন।
জেলা ওয়াকফ পরিদর্শক ও অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির তদন্ত কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক শাহিন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করেছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এর আগে খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের জমি বিক্রির চার কোটি টাকা এবং মসজিদের ফান্ড থেকে উঠিয়ে ৮৪ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগসহ মসজিদ রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. নজরুল তালুকদার বাদশা ও আ. হান্নান। এছাড়া মসজিদের অর্থ ও সম্পদ আত্মসাৎ, অবৈধভাবে জমি বিক্রি ও দখলে নেওয়াসহ দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মসজিদের নতুন কমিটি গঠনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেন তারা। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।