Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘যখন নিঃস্ব হয়ে গেলাম, তখন সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৩৯

ফাইল ছবি

ঢাকা: ক্ষুদ্রঋণসহ বিভিন্ন কৌশলে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলেও তা দেরিতে নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, সরকার তো ব্যবস্থা নিচ্ছে, কখন? যখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম, তখন। এ সময় ই-কমার্স প্রসঙ্গেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২০ সেপ্টম্বর) চড়া সুদে ঋণদাতা মহাজনদের চিহ্নিত করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেছেন আদালত। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক।

শুনানিতে সায়েদুল হক সুমন বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্রঋণের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ছাড়া আর কারও সুদের ব্যবসা করার সুযোগ নেই। কিন্তু সারা দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দেদারসে উচ্চহারে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এর শিকার হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, এমনকি মধ্যবিত্তও।

আদালত বলেন, আপনি যে তাদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করেছেন, তারা তো সনদ বাতিল করেছে। এর জাবাবে রিটকারী বলেন, সনদ বাতিল (১৩৪ ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান) হলেও তাদের ব্যবসা থেমে নেই। তাহলে সমাজে সুদের ব্যবসা কীভাবে হচ্ছে?

এর আগে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক বলেন, সরকার যে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। এহসান গ্রুপের মালিক ও ইভ্যালির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

আদালত বলেন, ‘সরকার তো ব্যবস্থা নিচ্ছে। কখন? যখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম, তখন। আমার রেমিডিটা কোথায়? আমার টাকাটা নিয়ে গেল, আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরব? তিনি থানায় যাবেন, জেলখনায় যাবেন ভাত খেয়ে ঘুমাবেন। কিন্তু আমার টাকাটা যে নিয়ে গেল, সেই টাকার কী হবে?’

আইনজীবী সুমন বলেন, মাইক্রোক্রেডিট অথরিটি চাইলে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন, ২০০৬ এর ৩৪ ধারা অনুযায়ী সুদের ব্যবসাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে ৪১ ধারা অনুযায়ী এ অথরিটির কাছে অন্য কেউ অভিযোগ করতে পারবে না। অভিযোগ করতে হবে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের কর্তৃপক্ষকে। এসব কারণেই কিন্তু প্রতারক চক্র গড়ে উঠছে। মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। তদারককারী হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা আছে। কিন্তু তারা তো তদারক করছে না। এই জন্য তাদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে রিটে।

এক পর্যায়ে আদালত বলেন, রাগীব (এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব এহসান) নামে এক হুজুর আগে শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতার টাকা দিয়ে হচ্ছে না। তখন ইসলামের দোহাই দিয়ে সুদমুক্ত হালাল টাকা— এই সমস্ত কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছেন।

জবাবে আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন বলেন, এগুলোই চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন। এরা মানুষকে একেবারে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মানুষ পথে বসে যাচ্ছে।

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালত অনির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর রুল হতে পারে না। কার ওপরে এ অভিযোগ আনা হয়েছে? কারা এই কাজগুলো করছে, তাদের নামগুলো সুনির্দিষ্ট করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তারা প্রতিকার চাইতে পারেন।

তখন আদালত বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যাদের কোনো রেজিস্ট্রেশন নাই, তারা দেশ থেকে চলে গেল। টাকা চুরি করে সাফ করে দিয়ে গেল। কে কোথায় কত সালে কত হাজার টাকা নিয়ে গেল, এই যে নিয়ে গেল আমাদের রাস্তাগুলো খোলা কেন? আমার বাড়ি অরক্ষিত কেন? আমার বাড়ি মানে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ দরজা-জানালা বন্ধ করে শান্তিতে ঘুমাবে, কিন্তু আমার ঘর কেন অরক্ষিত? আমাদের ঘরের দরজাগুলা কেন খোলা? মানুষের টাকা কেন লুট করে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বাইরে? এই দরজাগুলো খোলা কেন? কাদের দায়িত্ব এই দরজাগুলো বন্ধ করার, এগুলো আমরা একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাই। আমরা দেখে শুনে আদেশ দেব।

এরপর আদালত আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য দিন রেখেছেন। এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ওইসারা দেশে চড়া সুদে ঋণদাতা মহাজনদের চিহ্নিত করার নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন রিটটি দায়ের করেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস

হাইকোর্ট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর