সঠিক চিকিৎসা নিলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠে লিউকেমিয়া আক্রান্তরা
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৪৩
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন,ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল) হলো এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদী রক্তের ক্যান্সার। সিএমএল আক্রান্ত রোগীরা সঠিক চিকিৎসা নিলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠে।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটলজি বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ব সিএমএল দিবস উপলক্ষে আয়োজিত র্যালি ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন শারফুদ্দিন আহমেদ। সমাবেশের আগে প্রতিষ্ঠানটির ডি ব্লকের সামনে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে র্যালি ও দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন তিনি। এছাড়া ডি ব্লকের ১৫ তলায় আধুনিক হেমাটোলজি ওয়ার্ডের উদ্বোধন করেন।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সিএমএল হলো এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদী রক্তের ক্যান্সার। এ রোগ নিয়ে আতকিংত না হয়ে এর সুচিকিৎসা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এ রোগের সুচিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবন-যাপন সম্ভব।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন হয়েছে স্বাস্থ্যখাতও তার মধ্যে অন্যতম। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্পতম সময়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের ওষুধ বর্তমানে দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। বিশ্বের ১৫১টি দেশে বাংলাদেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে এটা স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের একটি বিরাট অর্জন।
সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) দারিদ্র দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সকলের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সর্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সঠিক পথে অগ্রসরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দিন শাহ।
অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দিন শাহ বলেন, সাধারণত পঞ্চাশ বা ষাট বছরের পরে বেশি দেখা যায় এই রোগটি। তবে ত্রিশ বা চল্লিশের দশকেও অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তুলনামূলকভাবে পুরুষরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, সিএমএল রোগের ক্ষেত্রে রোগীদের দুর্বলতা, শেষ রাতে ঘাম হওয়া, ওজন হ্রাস পাওয়াসহ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি অনেকের পেটের বামপাশে চাকা বা ভারী অনুভুতি থাকতে পারে যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে অনেকেই খাবার খেতে না পারা বা অল্প খেলে পেট ভরে যাবার সমস্যায় পড়তে পারেন।
তিনি আরও বলেন, অনেকের ক্ষেত্রে রোগ থাকা সত্ত্বেও রোগের কোনো প্রকার লক্ষণ প্রকাশ পায় না বরং রুটিন চেকআপ বা অন্য রোগের কারণে পরীক্ষা করতে গিয়ে এ রোগ ধরা পড়ে।
ডা. মো. সালাহউদ্দিন বলেন, নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং যথাযথ মনিটরিং করা সম্ভব হলে অধিকাংশ রোগীই প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। তবে কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এলোজেনিক হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল বা বোনমেরো ট্রান্সপ্লান্টেশন এর মাধ্যমে রোগ নিরাময় সম্ভব।
তিনি বলেন, সিএমএল যেহেতু দীর্ঘমেয়াদী রোগ, তাই অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা, দুশ্চিন্তা দেখা দিতে পারে। কারো ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যাও থাকতে পারে। সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। জাতীয় পর্যায়ে সিএমএল রোগীদের রেজিস্ট্রি তৈরি করার মাধ্যমে তাদের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা এবং তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।
এতে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগমসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এসবি