Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সম্মিলিত শক্তি দিয়ে সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০০:১১

ঢাকা: বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব ধরনের মতভেদ ভুলে গিয়ে আমাদের অবশ্যই ‘অভিন্ন মানবজাতি’ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে; সম্মিলিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবার জন্য আবারও এক সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৬তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে রোহিঙ্গা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে গুরুত্ব দেন। তার ভাষণে অগ্রাধিকার পাওয়া অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে টেকসই উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও অসমতা দূরীকরণ।

প্রধানমন্ত্রী গত ২১ সেপ্টেম্বর ইউএনজিএ জেনারেল ডিবেটের প্রথম দিন অংশগ্রহণ করেন। এ অধিবেশন আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

তার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনের সভাপতিকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আপনার ‘প্রেসিডেন্সি অব হোপ’ (প্রত্যাশার নেতৃত্ব) টেকসই পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাবে যেখানে কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না। নজিরবিহীন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাধারণ পরিষদের ঐতিহাসিক ৭৫তম অধিবেশনে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বিদায়ী সভাপতি জনাব ভোলকান বোজকিরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের যে, আমি এ নিয়ে ১৭ বার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আমার দেশ বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ পরিষদের এই ৭৬তম অধিবেশনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন কোভিড-১৯ বিশ্বজুড়ে অব্যাহতভাবে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। করোনার নতুন ধরনের মাধ্যমে অনেক দেশ বার বার সংক্রমিত হচ্ছে। এ মহামারিতে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সংকটকালে নিবেদিত সেবা ও আত্মত্যাগের জন্য আমি সম্মুখসারির সকল যোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। কোভিড-১৯-এর নির্মম বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এ অধিবেশনের প্রতিপাদ্য ‘প্রত্যাশা’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। বহুপাক্ষিকতাবাদ ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার দৃঢ় সমর্থক হিসেবে বাংলাদেশ এই সংকটকালে জাতিসংঘকে আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে দেখে। সব ধরনের মতভেদ ভুলে গিয়ে আমাদের অবশ্যই ‘অভিন্ন মানবজাতি’ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে; সম্মিলিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবার জন্য আবারও এক সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ বছরটি আমাদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। একইসঙ্গে আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘‌মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছি। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার আজীবন নিঃস্বার্থ সংগ্রাম ও দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের এনে দিয়েছে স্বপ্নের স্বাধীনতা। আমি শ্রদ্ধা জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি, যাদের অসীম বীরত্ব ও আত্মত্যাগে আমাদের মাতৃভূমি স্বাধীন হয়েছে। আমাদের জাতির পিতা ছিলেন বহুপাক্ষিকতাবাদের একজন দৃঢ় সমর্থক। তিনি জাতিসংঘকে জনগণের ‘আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্র’ মনে করতেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জাতিসংঘ অভিযাত্রার প্রথম দিনে ১৯৭৪ সালের ২৫-এ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে প্রদত্ত তার ঐতিহাসিক একমাত্র ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: কোট: আত্মনির্ভরশীলতাই আমাদের লক্ষ্য। জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ উদ্যোগই আমাদের নির্ধারিত কর্মধারা। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সম্পদ ও প্রযুক্তিবিদ্যায় অংশীদারিত্ব আমাদের কাজকে সহজতর করতে পারে, জনগণের দুঃখকষ্ট লাঘব করতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এমন একটি বিশ্ব গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন যেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার, আগ্রাসন ও পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি থাকবে না। সাতচল্লিশ বছর আগের তাঁর সে আহ্বান আজও সমভাবে প্রযোজ্য। এ জন্য আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের যে কোনো উদ্যোগে সমর্থন ও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসের টিকার ন্যায্য হিস্যা দাবী, ফিলিস্তিনিদের প্রতি যেকোনো ধরনের অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় অবস্থান, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা—এসব আমাদের বৈশ্বিক অঙ্গীকারের কতিপয় উদাহরণ মাত্র।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপিতে আমরা বিশ্বের ৪১তম। গত এক দশকে আমরা দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি’— বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়সহ নানা সূচকে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সময়ে আমাদের মাথাপিছু আয় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২,২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছি। গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২৩ দশমিক ৬৭-এ কমে এসেছে। প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ১৭৩-এ হ্রাস পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর।’

শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য মতে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম। ২০১৪ সাল থেকে এ সূচকে বাংলাদেশ আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশগুলোর চাইতে এগিয়ে আছে। আমাদের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস, নারীর ক্ষমতায়নসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছে। আমরা ব্যাপকভাবে ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী’ কর্মসূচির সম্প্রসারণ করেছি। ‘টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১’ অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রার সূচকে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে। এ সাফল্যের মূলে রয়েছে নারীর উন্নতি ও ক্ষমতায়নে বিপুল বিনিয়োগ। এ বিনিয়োগ আমাদের রূপান্তরসক্ষম উন্নয়নে বিপুল অবদান রেখেছে।’

‘এ বছর আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের মাইলফলক অর্জন করেছি। এখন আমাদের স্বপ্ন বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও টেকসই বদ্বীপে রূপান্তর করা’—বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সারাবাংলা/এনআর/একে/আইই

জাতিসংঘ জাতিসংঘের ভাষণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর