প্রতিবাদ-বর্জনে উত্তাল রবীন্দ্র, ভিসির আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:৫৮
সিরাজগঞ্জ: ১৪ জন শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। পরে উপাচার্য হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেছে।
মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালেই পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন।
খবর পেয়ে উত্তাল ক্যাম্পাসে হাজির হন উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা আব্দুল লতিফ। তিনি এ সময় শিক্ষার্থীদের হলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিচারের আশ্বাসও দেন তিনি। জানান, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
আরও পড়ুন- ১৪ ছাত্রের চুল ‘কেটে’ দিয়েছে শিক্ষক, একজনের আত্মহত্যার চেষ্টা
শিক্ষার্থীরা উপাচার্য আব্দুল লতিফের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত করেন। এসময় তারা প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের অপসারণ চেয়ে স্মারকলিপি দেন।
তানভীর ও জাহিদুল ইসলামসহ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত হওয়া পারীক্ষার সময়সূচি নিয়ে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় ওই শিক্ষার্থীদের চুল কেটে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষার হলে যেতে বলেন ওই শিক্ষক। পরদিন চুল না কেটে পরীক্ষা দিতে যাওয়া ১৪ জনের মাথার সামনের অংশের চুল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় কেটে দেন তিনি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ঘটনার জের ধরে পরীক্ষা শেষে নাজমুল হোসেন তুহিন (২৫) ছাত্রাবাসে গিয়ে তার কক্ষের দরজা বন্ধ করে বেশকিছু ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মাহত্যার চেষ্টা করেন। সহপাঠীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে দ্রুত তাকে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
এ ঘটনার পর সোমবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে পরীক্ষা বর্জন করেন। পরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার জন্য বিসিক বাস স্ট্যান্ড এলাকার শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস-১-এর গেটে জড়ো হলে ওই শিক্ষক তাদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান রওশন আলম শিক্ষার্থীদের বলেন, আপনাদের দাবি-দাওয়া লিখিত আকারে জমা দিন। প্রক্টরিয়াল বডি আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যেই অপরাধী হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, ‘আমরা নাজমুলের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তার উন্নত চিকিৎসা চলছে। আশা করি সে দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। এছাড়াও এই ঘটনার সঠিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বরীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় আমি সেখানেই ছিলাম। পরে তাদের ডেকে নিয়ে এসে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলেছি। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা শান্ত হয়ে ফিরে গেছেন।
শিক্ষার্থীরা একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন জানিয়ে আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা এখন তাদের স্মারকলিপির বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। সেই তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/টিআর