২ বছরের জন্য জাতীয় সরকার চান জাফরুল্লাহ
১ অক্টোবর ২০২১ ২০:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় সত্যিকারের নির্বাচনের জন্য দুই বছর মেয়াদের জাতীয় সরকার গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বলেন, ‘সত্যিকার ভোট হতে হলে দুই বছরের জন্য একটা জাতীয় সরকার লাগবে। সব পরিবর্তন করতে হবে। জাতীয় সরকার হোক, দেখবেন দুই সপ্তাহের মধ্যে ওষুধের দাম অর্ধেক হয়ে যাবে। না হলে আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেবেন।’
শুক্রবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ব্রেন থেকে পা পর্যন্ত অপারেশনের জন্য এক লাখ টাকার ওপর খরচের জায়গা নেই। তিন হাজার টাকার অপারেশনে দুই হাজার টাকা লাভ থাকে। অথচ ঢাকা শহরে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা নেওয়া হয়। এসব পরিবর্তন করতে হবে।’
পরিবর্তনের জন্য জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তন দরকার। জনগণের সরকার দরকার। রাস্তায় নামতে হবে। জনগণের সরকার হলে বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাবে না। প্রত্যেক লোকের চাকরি হবে। কেউ অভাবে থাকবে না।’
জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করেছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর হাওয়া-বাতাস খেয়ে, আমাদের পয়সায় পৃথিবী ঘুরে উৎফুল্ল হয়ে এ দেশে ফিরে আসছেন। এটা আমাদের জন্য সুসংবাদ। আমি উনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। ১২ দিন থেকে কত পয়সা তিনি খরচ করেছেন? অথচ খালেদা জিয়া দুই কোটি টাকা ঠিকমতো জমা না দেওয়ার কারণে দুই বছর ধরে জেলের ঘানি টানছেন…।’
‘প্রধানমন্ত্রী যে টাকা খরচ করেছেন, এর অর্ধেক টাকাও ব্যয় করলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা থাকত না। চট্টগ্রামে ড্রেনে পড়ে যে চার জন নাগরিক মারা গেছেন, তাদের জীবনহানি হতো না। তবুও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। আপনার বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করি। মহিলারা অনেক বেশি বুদ্ধিমতী হয়। আমি আমার মাকে দেখে বুঝেছি এটা,’— বলেন ডা. জাফরুল্লাহ।
জাতিসংঘের অধিবেশনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মসূচিরও সমালোচনা করেন জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) ১২ দিন কোথায় কাটালেন? কোথায় ফিনল্যান্ড আর কোথায় নিউইয়র্ক। হঠাৎ উনার ফিনল্যান্ডে যাওয়ার শখ হলো কেন? ফিনল্যান্ডের সরকার তো উনারে দাওয়াত দেননি। উনি কেন গেলেন? রেহানা বলে, শেখ মুজিবের আমিও তো মেয়ে। রেহানার ছেলের বৌ ফিনল্যান্ডের খ্রিস্টান, হাসিনার ছেলের বৌ ইসরাইলের ইহুদি। বোঝেন তো, এগুলো সমস্যা হয়। এগুলো মিটমাট করার জন্য প্লেন বসিয়ে রেখে তিনি ফিনল্যান্ডে গেছেন।’
পুলিশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘পুলিশ রাতের বেলা ভোট ডাকাতি করে, আরেকদিকে সিনহাকে মারে— তারপরও তারা তাদের অবস্থানে ঠিক আছে। তবে ভোট চুরির ইতিহাস কিন্তু আজকের না, অনেক পুরনো। এরপরও আমি হাসিনার প্রশংসা করি। আমি কিন্তু হাসিনার ভক্ত মানুষ। উনি সুন্দর করে কথা বলেন। আমার নামে মাছ চুরির মামলা দিলেও দেখা হলে ভাই ডেকে কথা বলেন।’
চট্টগ্রামে রাস্তায় নোবেলজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের ছবি না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শেখ মুজিবের বিশাল অবদান। এটাকে ছোট করা যাবে না। জিয়াউর রহমানের কথা আমি এখানে বলব না। কিন্তু সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশকে যিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, তিনি হলেন ড. ইউনূস। পৃথিবীর কোনো দেশে হয়তো এখনো গেলে শেখ মুজিবের নাম বললে লোকজন তাকিয়ে থাকবে, কিন্তু ইউনূসের নাম বললে বলবে— ওহ, ড. ইউনূস! অথচ চট্টগ্রাম শহরে তার একটা ছবি পর্যন্ত নাই। আমরা এতবড় নিমকহারাম, আমাদের মন এত ছোট!’
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর ভাস্কর্য ‘চোখে না পড়ায়’ একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের কথা মনে পড়লেই মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা তার কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনুমোদন হয়নি। জহুর আহমদ চৌধুরী এটা জানার পর প্রথম সমর্থন দেন। উনি শ্রমিক নেতা ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। জহুর আহমদ চৌধুরীর একটা ভাস্কর্য কি চট্টগ্রামে থাকতে পারত না?’
চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘সিআরবিকে, প্রকৃতিকে, আমাদের ফুসফুসকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরে একটি হাসপাতাল আছে। ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল। ডা. রবিউল হোসেন এটা তৈরি করেছেন। তিনি একটা চক্ষু হাসপাতালও করেছেন। পৃথিবীর ১০০টি হাসপাতালের তালিকা করলে এই চক্ষু হাসপাতালের নাম আসবে। সিআরবিতে আর হাসপাতাল লাগবে না।’
গণসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং মুহম্মদ আমির উদ্দিন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর