খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা— মুখরিত ঢাবি ক্যাম্পাস
২ অক্টোবর ২০২১ ১৩:১৭
ঢাকা: মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় বসেছেন কুমিল্লার মেয়ে মার্টিনা দেব নাথ। কেন্দ্র—বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ। কেন্দ্রের ঠিক উল্টো পাশেই পত্রিকা পেতে বসে আছেন মার্টিনার দুলাভাই কৃষ্ণদেব নাথ। মার্টিনাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। তিনি এনেছেন চোখ জুড়ে সংশয়-সম্ভাবনার দোলাচল।
কৃষ্ণ দেব নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। আমার শ্যালিকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়েছে। প্রস্তুতি তার আছে। পরীক্ষা চলছে। তবুও চিন্তা তো হচ্ছেই।’
কৃষ্ণদেব নাথের মতো হাজারও অভিভাবক ক্যাম্পাস জুড়ে অপেক্ষা করে আছেন—কখন তাদের ছেলে, মেয়ে, ভাগ্নে কিংবা ভাইপো পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসবেন।
শনিবার (২ অক্টোবর) বেলা এগারোটা নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
খ ইউনিটে এবার আবেদন পড়েছে ৪৭ হাজার ৬৩২টি। বিপরীতে এই ইউনিটে মোট আসন সংখ্যা ২ হাজার ৩৭৮টি।
দেশের অভ্যন্তরে আট বিভাগের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই আজ পরীক্ষায় বসার কথা খ ইউনিটে মোট আবেদনকারীদের মধ্যে ১৮ হাজার ৮৫০ জন শিক্ষার্থীর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, কলা, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদসহ বিভিন্ন অনুষদের ভবনগুলোতে আছে কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৮৫২ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হাজার ৭২ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হাজার ২০৪ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৩৭৭ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯২১ জন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৭৪১ জন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৬১৫ জন ভর্তি পরীক্ষায় বসার কথা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে— উদ্বিগ্ন-চিন্তারত অভিভাবকরা বসে আছেন এদিক-সেদিক। কেউ স্বেচ্ছসেবকদের দেওয়া চেয়ারে, কেউবা পত্রিকা বিছিয়ে বসে পড়েছেন। কেউ কেউ সরাসরি মাটিতেই বসেছেন, কেউবা একটি চেয়ার পেতে বসে আছেন। তাদের সবার চোখের ভাষাই যেন এক—কখন কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বেরিয়ে আসবেন।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সহায়তা দিতে ছাত্রলীগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছেন। প্রয়োজনীয় তথ্য সরবারাহ, মাস্ক-স্যানিটাইজার বিতরণ, অভিভাবকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা কিংবা কেন্দ্রে ঢোকা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সামলে রাখা—এমন সব সহায়তা দেওয়া হচ্ছে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে দাঁড়িয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তা দিতে থাকা বিজয় একাত্তর হল সংসদের সদ্য সাবেক এ জি এস ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ইউনুস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একাত্তর হল ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সুপেয় পানি, মাস্ক প্রভৃতি বিতরণ করছি। ভর্তিচ্ছু ৫০ জন শিক্ষার্থী তাদের মোবাইল ফোন আমাদের কাছে রেখে গেছেন। এ ছাড়া ব্যাগপত্রসহ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমরা সামলে রেখে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
স্বেচ্ছসেবামূলক এ সব সহায়তা কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখে গেছে অভিভাবকদের। সাভার থেকে আসা একজন অভিভাবক জাহিদ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বেচ্ছসেবীরা আমাদের জন্য চেয়ার দিয়েছেন৷ খাবার পানি দিয়ে গেছেন। কয়েকবার এসে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে গেছেন। তাদের জন্য অন্তর থেকে দোয়া আসে।’
সারাবাংলা/আরআইআর/একে