এবার অর্ধেক ইলিশও পায়নি জেলেরা, মৌসুম শেষের পথে
৩ অক্টোবর ২০২১ ১২:১৬
পটুয়াখালী: গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক ইলিশও ধরতে পারেনি কুয়াকাটার জেলেরা। শেষের পথে এখন মাছ ধরার মৌসুম। ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে জেলে পরিবারে।
কুয়াকাটায় বৈশাখ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত নদী কিংবা বঙ্গোপসাগরে ইলিশ পাওয়া গেলেও জ্যেষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসকে ইলিশের ভরা মৌসুম ধরা হয়।
মৎস্য অধিদফতরের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী— ইলিশ মৌসুম শুরু হয়েছে ১ জুলাই থেকে। কিন্তু ২১ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মা ইলিশের নির্বিঘ্ন প্রজনননের জন্য, ৪ অক্টোম্ববর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনসহ মোট ৮৭দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হয় জেলেদের।
এরপর জাটকা সংরক্ষণের জন্য রয়েছে ছয় মাস মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা। রয়েছে বৈরি আবহাওয়ার প্রভাব। ফলে বছরের অর্ধেকটা সময় জেলেদের সময় কাটাতে হয় ঘাটে বসে। উপকূলের জেলেরা সাধারণত ইলিশ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকে। ইলিশ শিকারে টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আগামী ৪ অক্টোম্ববর থেকে ২৫ অক্টোম্ববর।
মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে আশ্বিনের অমাবস্যা ও পূর্ণিমা মাঝে রেখে গত কয়েকবছর এ পদক্ষেপ নিচ্ছে মৎস্য অধিদফতর। আশ্বিনের অমাবস্যায় পানি বাড়লে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর ছেড়ে মিঠাপানির দিকে ছুটতে থাকে। কিন্ত প্রায় আড়াই মাস আগে ইলিশ মৌসুম শুরু হলেও নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা।
প্রতিটি অমাবস্যায় পুর্ণিমায় জেলেরা আশায় বুক বাঁধেন এই ভেবে যে পানির চাপের সঙ্গে নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ আসবে। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত সে আশা পূরণ হচ্ছে না। সে আশা থেকে গেল। এখন শেষে পথে ইলিশ মৌসুম। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক পরিমাণও ইলিশ পায়নি জেলেরা।
কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় গভীর পানির সন্ধানে ইলিশের গতিপথও পরিবর্তনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগরের যেতে তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে সাগরে মাছ ধরার জন্য যেতে পারেনি জেলেরা। এ বছর বারবার তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে আবার ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা।
দেশের মোট ইলিশের দুই-তৃতীয়াংশ আহরিত হয় বরিশাল বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী ও সাগর থেকে। গত তিন বছর মোটামুটি ইলিশ পাওয়ার পর এবছর কোথায় গেলে ইলিশ এ প্রশ্নের উওর পাওয়া মুশকিল।
জেলে কামরুল হাসান জানান, জুলায়ের শুরু থেকেই দফায় দফায় নিম্নচাপ ও লঘুচাপে সাগর উওাল থাকায় জেলেরা ইলিশ ধরতে তেমন সুবিধা হয়নি। যেটুকু পাওয়া গেছে তা জাটকা ইলিশ।
ট্রলার মালিক হাজী আক্তার হোসেন গাজী বলেন, ‘গত বছর মাঝি-মাল্লাদের বেতন দিয়ে কোনো রকম ইলিশের ব্যবসা করেছিলাম। এ বছর অবস্থা খুবই খারাপ। গদিতে লাখ লাখ টাকা পাওনা। এ টাকা কীভাবে শোধ করব তা নিয়ে এখন চিন্তায় আছি।’
পটুয়াখালীর জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদ উল্লাহ বলেন, গত নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত ৭ মাসে জেলায় একবারও বৃষ্টিপাত হয়নি। এ জন্য ইলিশ মাছ ধরা পড়ার প্রভাবটা কম। তা ছাড়া বৃষ্টি হলে মাছের পেটে ডিম আসে।’
‘মোহনা সংলগ্ন রাঙ্গাবালীর সোনারচর ও ভোলার ডালীরচর পলিমাটি পড়ে ভরাট হওয়ার কারণে ইলিশ মাছের আনাগোনা কমে গেছে’—বলেও জানান মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদ উল্লাহ।
সারাবাংলা/একে