গ্রাহকদের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কিউকম
৪ অক্টোবর ২০২১ ১৬:২১
ঢাকা: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম তার গ্রাহকদের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
সোমবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর মিন্টু রোডের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
হাফিজ আক্তার বলেন, ‘নির্দিষ্ট অভিযোগে ভিত্তিতে গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে কিউকমের সিইও মো. রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করে ডিবি মতিঝিল বিভাগ। পরে তার বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে এক ভুক্তভোগী গ্রাহক একটি মামলা করেন। দুই ধারায় মামলাটি হয়। একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ও অপরটি প্রতারণার। করোনাকালীন ই-কমার্স ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটে। নাগরিকরাও এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তবে বেশ কিছু বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। কিউকমও করোনাকালীন তাদের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে কিউকমের অনেক ক্রেতাই পণ্য অর্ডার করে মালামাল না পেয়ে প্রতারিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মো.রিপন মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, কিউকম প্লাটফর্মে ব্যবহার করে মো. রিপন মিয়া লক্ষাধিক পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা করে আসছিল। তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং করার জন্য তারা ব্যপকভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি করে। বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে কিউকম কম দামে মোটরসাইকেল বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল। বাজার যেই মোটরসাইকেলের দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা সেই মোটরসাইকেল তারা ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিত। প্রচুর সংখ্যক ক্রেতা অর্ডার করে মোটরসাইকেল না পেয়ে তারা হতাশায় ভোগে।’
এ ক্ষেত্রে মো রিপন মিয়া আরও জানায়, সে মোটরসাইকেল ডেলিভারি না দিয়ে ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চেক দিয়ে দিত গ্রাহকদের।
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা জানি যে বাংলাদেশ ব্যাংক জুন মাস থেকে এস্ক্রো সিস্টেম (Escrow System) চালু করে। এর অধীনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম চালু করে। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ফোস্টার (Foster) নামে একটি কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের পেমেন্টটি ফোস্টারের কাছে থাকবে, পণ্য ডেলিভারি পর পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাবে ফোস্টার। কিউকমের পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে চেক প্রদানের বিষয়টি ফোস্টারের নজরে আসে। পরে ফোস্টার কিউকমের সকল পেমেন্ট আটকিয়ে দেয়। ফোস্টার এখন পর্যন্ত কিউকমের ৩০০ কোটি ৯৭ লাখ টাকার মোটরসাইকেলের পেমেন্ট আটকিয়ে দিয়েছে বলে রিপন মিয়া আমাদের কাছে দাবি করে। এ ছাড়া তার কাছে গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ২৫০ কোটি টাকা আটকে আছে।’
মামলাটি তদন্ত চলছে এবং অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।
রিপন মিয়ার ব্যাংক এ কত টাকা আছে এবং গ্রাহকদের কিভাবে ফেরত দেবে ডিবিকে রিপন মিয়া জানিয়েছে কিনা জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সে আমাদের কাছে বলে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পারবে এবং এই সমস্যা থেকে বের হয়ে যেতে পারবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের মূল্যছাড় দিয়ে কাজগুলো করছে। অর্থাৎ এগ্রেসিভ মার্কেটিং পলেসি নিয়ে তারা প্রতারণার কাজগুলো করছে। জনগণের স্বার্থে আমরা ই-কমার্স সাইটগুলোকে ধরছি। হাতে গোনা ৪-৫ টি প্রতিষ্ঠানরা অনিয়ম করছে, আমরা তাদের ধরছি। আমরা আশা করছি— যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ই-কমার্সের সুফল পাবে নাগরিকরা। তবে মামলা হলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি, এ ছাড়া নয়।’
কিউকমের ৩০০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ফোস্টারের কাছে আছে। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এইটা শুধুমাত্র মোটরসাইকেলের টাকা। মোটরসাইকেলের ডেলিভারি যারা দিয়েছেন তারা টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
অন্য কোনো এমএলএম কোম্পানির সঙ্গে মো. রিপন মিয়ার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল তাকে গ্রেফতার করছে। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব।’
কিউকমের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী ঠিক কি অভিযোগ করছেন জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, ‘তিনি বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল অর্ডার করে পেমেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু পেমেন্ট দেওয়ার পরেও তিনি মোটরসাইকেলের ডেলিভারি পাননি। তাকে গ্রেফতারের পর প্রচুর সংখ্যক ভুক্তভোগী আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে এসেছে। সে এখন মালামাল না দিয়ে চেক দেওয়ার শুরু করেছে। এছাড়া চেক দিয়ে সে গ্রাহকদের যে কমিটমেন্টের দিয়েছিল সেটার বরখেলাপ করেছে।’
চেক যাদের দিয়েছে তারা কি টাকা হাতে পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু লোক টাকা তুলতে পেরছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
যারা ই-কমার্স প্রতারণায় গ্রেফতার হয়েছে তারাছাড়াও অন্য প্রতারকদের বিষয়ে ডিবি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতারণা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নিব। সম্প্রতি সময়ে দেখা গেছে অনেকে অনলাইনে টাকা ঋণ দিয়ে সুদের ব্যবসা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সারাবাংলা/ইউজে/একে