ফারমার্সের ঋণ আত্মসাৎ: সিনহাসহ ১১ আসামির সর্বোচ্চ সাজা চায় দুদক
৫ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৫৭
ঢাকা: সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ (এস কে সিনহা) ১১ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য রয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালত এই রায় ঘোষণা করবেন।
রাষ্ট ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত গত ১৪ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার জন্য এই ধার্য করেছেন। এর আগে, গত ২৯ আগস্ট মামলাটিতে পলাতক আসামিরা ছাড়া অন্যান্যরা আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। গত ২৪ আগস্ট মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলায় ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
২০২০ সালের ১৩ আগস্ট বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম মামলাটির চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক এবং টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়। মামলার তদন্তের সময় এজাহারভুক্ত আসামি মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদ মারা গেলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মামলার ১১ আসামির মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) কারাগারে রয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক। বাকিরা জামিনের রয়েছেন।
এদিকে, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দাবি করেছেন দুদকের পক্ষের আইনজীবী। অন্যদিকে কারাগারে ও জামিনে থাকা আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। তাই তারা খালাস পাবেন। তবে মামলায় এসকে সিনহাসহ চার আসামি পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন হয়নি।
আরও পড়ুন: ফারমার্স ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, এসকে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা
দুদকের আইনজীবী মীর আহাম্মেদ আলী সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক সময় রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি ছিলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ওই সময় তার প্রভাবে ব্যাংকাররা মিসগাইড হয়। ফলে লোন দিতে যেসব প্রক্রিয়া ফলো করা দরকার তারা সেগুলো করেনি। তারা টাকাগুলো হস্তান্তর, রূপান্তর এবং ছদ্মাবরণ করে মানিলন্ডারিং করেছে। তিন ধারায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এটা দুর্নীতির একটা পরিষ্কার কেস। সমস্ত ডকুমেন্ট আমরা সাবমিট করেছি। বিজ্ঞ আদালত যদি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করেন তাহলে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।’
বাবুল চিশতি ও লুৎফুল হকের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ মামলার আসামি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা শুরু থেকে পলাতক আছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে যে ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, সেই ধারা আসামিদের বিরুদ্ধে যায় না। মামলায় চার কোটি টাকা ঋণের কথা বলা হয়েছে। এর অধিকাংশই পরিশোধ হয়ে গেছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাই করে ঋণটা মঞ্জুর করা হয়। যখন ঋণটা মঞ্জুর হয় তখন এটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। পরে বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতায় এ বিষয়ে প্রশ্ন এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাবুল চিশতি ঘটনার সময় ছিলেন অডিট কমিটির চেয়ারম্যান এবং লুৎফুল হক ব্যাংকার। চিশতি সাহেবকে জড়ানো হয়েছে প্রত্যক্ষ প্রভাবে। মামলাটির যে তথ্য-উপাত্ত এসেছে সেখানে আসামিদের সাজা দেওয়ার সুযোগ নেই। তারা খালাস পাবেন।’
গত ৫ জানুয়ারি ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর ও আত্মসাতের অভিযোগে দেওয়া চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। এরপর আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের হাজির হতে নির্দেশ দেন।
২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১-এ এই মামলাটি দায়ের করেন। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক পরিচালক বেনজীর আহমেদ এ চার্জশিট দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে চার কোটি টাকা ভুয়া ঋণ তৈরি করে তা একই দিনে পে-অর্ডারের মাধ্যমে আসামি এসকে সিনহার ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করেন।
পরে এসকে সিনহা নগদ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা সরিয়ে নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সারাবাংলা/এআই/পিটিএম
ঋণ আত্মসাৎ এস কে সিনহা দুদক ফারমার্স ব্যাংক সুরেন্দ্র কুমার সিনহা