শাহজালালে ভোগান্তির অভিযোগ, করোনা পরীক্ষা চালু হচ্ছে চট্টগ্রামেও
৫ অক্টোবর ২০২১ ০৮:২৭
ঢাকা: বিদেশগামী প্রবাসীদের জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে ছয় দিন হলো। কিন্তু এই নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে যাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিমানবন্দরে এসে নমুনা পরীক্ষা করাতে না পেরে ফ্লাইট মিস করার অভিযোগও করছেন কেউ কেউ।
চট্টগ্রাম ও সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকলেও নমুনা পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় বিদেশগামী যাত্রীদের এই চাপ পুরোটাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতিতে শাহজালালে আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করা হলেও দ্রুততম সময়ে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে র্যাপিড পিসিআর টেস্ট চালুর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটেও নমুনা পরীক্ষা চালুর দাবি তাদের।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একাধিক সূত্র বলছে, সংস্থাটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান স্বাস্থ্য বিভাগকে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যত দ্রুতসম্ভব করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) বেবিচকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দেওয়া হবে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান সোমবার (৪ অক্টোবর) রাতে সারাবাংলাকে বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে দ্রুত র্যাপিড টেস্ট শুরু করার জন্য আগামীকাল (মঙ্গলবার) স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দেওয়া হবে। এখন তারা কত দ্রুত আর কতদিনের মধ্যে সেটি শুরু করতে পারবে, সেটি তাদের বিষয়।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা করতে গিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনের সময় প্রতি ঘণ্টায় যে পরিমাণ নমুনা পরীক্ষার হিসাব দেওয়া হয়েছিল, সে পরিমাণ পরীক্ষা ল্যাবগুলো করতে পারছে না। ফলে কিছুটা সময় তো লাগছেই। এ কারণেই যাত্রীদের চাপ কমিয়ে ভোগান্তি এড়াতে আমরা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নমুনা পরীক্ষা চালুর বিষয়ে একমত হয়েছি। কারণ ঢাকায় অনেক যাত্রী নির্ধারিত সময়ে এসেও ফ্লাই করতে পারছেন না। আমরা তাই চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে তাগিদ দিচ্ছি।
এর আগে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে আরটি-পিসিআর ল্যাবের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড, স্টেমজ হেলথকেয়ার বিডি লিমিটেড, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক।
আরও পড়ুন: নমুনা নেয়নি বিমানবন্দরের ল্যাব, আবুধাবিগামী ফ্লাইট মিস ৩ জনের
এই প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমোদন পাওয়ার পর জানায়, শাহজালালে ঘণ্টায় তিন থেকে চার হাজার নমুনা পরীক্ষা সম্ভব। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা শুরুর পর ল্যাবগুলো এই পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছে না। ফলে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ মিলছে। কেউ কেউ প্রবাসে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে গ্রামেও ফিরে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে কথা বলে বেবিচক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে।
সোমবার (৪ অক্টোবর) হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে প্রবাসী যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত রোববার একাধিক যাত্রী ফ্লাইটের সাড়ে ৪ ঘণ্টা আগে ল্যাবে গিয়েও নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেননি। এমনকি বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের কর্মীরা অনুরোধ জানালেও নমুনা নেয়নি ল্যাবগুলো। ফলে যাত্রীরা গন্তব্যে যেতে পারেননি। ল্যাবগুলো বলছে, ৬ ঘণ্টা আগে নমুনা দিতে হবে। কিন্তু রাজধানীর যানজট ও বিমানবন্দরে নানা প্রতিকূলতার কারণে কিংবা বিমানবন্দরে যাত্রী সহায়তা না পেয়ে অনেক যাত্রী ফ্লাইটের আগে খেই হারিয়ে ফেলেন। ফলে বিমানবন্দরে যাত্রীদের নানা জটিলতার কারণে ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না।
অনেক যাত্রী বলছেন, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে দুই-তিন আগে ঢাকায় এসে হোটেলে থেকে নির্ধারিত সময়ের আগে শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছালেও তারা করোনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না। এছাড়া বিমানবন্দরের ভেতরে করোনা পরীক্ষার দীর্ঘ লাইন থাকে, সেখানে নিয়মশৃঙ্খলাও থাকে না। ল্যাবগুলোতে যাত্রীবান্ধব দক্ষ জনবল না থাকায় তাদের কাছ থেকে সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে যাত্রীদের।
এসব অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহরিয়ার সাজ্জাদ সারাবাংলাকে বলেন, আমরা যাত্রীদের ভোগান্তির অভিযোগ পাচ্ছি। কিন্তু হাতে সময় না নিয়ে এলে ল্যাবে যারা কাজ করেন, তাদেরও কিছু করার থাকে না। আমরা গতকাল (রোববার) ও আজ (সোমবার) আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, যাত্রীদের ফ্লাইটের কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা আগে নমুনা দিতে হবে। তা না হলে তাদের সনদ দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই যেভাবেই হোক, যাত্রীদের এই সময় মেনেই বিমানবন্দরে আসতে হবে।
র্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে বিমানবন্দরের এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, নমুনা পরীক্ষার সময় কমাতে আমরা র্যাপিড পিসিআর টেস্ট চালুর বিষয়টি নিয়েও কথা বলছি। তবে তাতে খরচ পড়বে বেশি। যারা নির্ধারিত সময়ে আসতে পারবেন না, তাদের বেশি টাকা দিয়ে র্যাপিড পিসিআর টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। র্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি অনুমোদন পেলে আমরা জানিয়ে দেবো।
এদিকে, শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় দিনে বিমানবন্দরে নমুনা পরীক্ষা করে সংযুক্ত আরব আমিরাত গেছেন ৩ হাজার ২৪৯ জন যাত্রী। এর আগে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় আরব আমিরাতে কোনো ফ্লাইট চলেনি। ফলে বহু প্রবাসী আটকা পড়েছেন দেশে।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর