আবরার হত্যা মামলার রায় হতে পারে নভেম্বরে
৬ অক্টোবর ২০২১ ১০:৪৭
ঢাকা: ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আলোচিত এই মামলাটির দুই বছর পর রায় হতে চলেছে। আগামী নভেম্বর মাসের দিকে মামলাটির রায় ঘোষণা হতে পারে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু বিচারক করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ থাকায় তা পিছিয়ে আগামী ২০ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মনির কামাল।
সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া জানান, মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমাদের আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু করোনার কারণে আদালত কয়েক মাস বন্ধ থাকায় কার্যক্রম হয়নি। এরপর আবার মামলাটির বিচার শুরু হয়। কিন্তু পুনরায় মহামারির কারণে আদালত বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে মামলার বিচার কিছুটা পিছিয়ে যায়। এখন মামলাটির যুক্তিতর্ক চলছে। এরই মাঝে বিচারক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এজন্য কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। আগামী ২০ অক্টোবর মামলাটির তারিখ ধার্য আছে। আশা করছি সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বরের মাসের মধ্যে মামলাটির রায় ঘোষণা হবে পারে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের সর্বোচ্চো সাজা হবে বলে আশা করছি। আর যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে না তারাও ন্যায় বিচার পাবেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহাম্মদ জানান, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ তাকে হত্যা করতে চায়নি। আসামিদের এমন উদ্দেশ্য ছিল না। অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটনাটি ঘটে গেছে। এখন দেখা যাক কি হয়। এটা একটা সেনসিটিভ মামলা। তবে আমরা আশা করছি, আসামিরা খালাস পাবেন।
নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ জানান, আমার ছেলেকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড আশা করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো কার্যকলাপ যেন না হয় সেই আশা করছি৷ জড়িত সকল আসামিদের আদালত সর্বোচ্চ সাজা দিবেন বলে আশা করি।
আরও পড়ুন: করোনায় ঝুলে গেছে আবরার হত্যার বিচার
একমুঠো ভাত— অভিনব উপায়ে আবরার হত্যার বিচার দাবি অঙ্কুরের
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহার নামীয় ১৯ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত এজাহার বহির্ভূত ৬ জন। এর মধ্যে এজাহারভূক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন ও এজাহার বহির্ভূত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৮ জন বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
আরও পড়ুন: আবরার হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ৭ সেপ্টেম্বর
আবরার হত্যা: সাফাই সাক্ষীতে আদালতে যা বললেন ২ আসামি
চার্জশিট ভুক্ত আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু। আর চার্জশিট ভুক্ত পলাতক তিন আসামি হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। গত ১৩ জানুয়ারি আবরার হত্যা মামলার নথিটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ পাঠানোর আদেশ দেন।
সারাবাংলা/এআই/এনএস