বিজ্ঞাপন

করোনায় ঝুলে গেছে আবরার হত্যার বিচার

June 10, 2021 | 8:41 am

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসেপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি বেশ আলোচিত ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ঘটনাটি ঘটলেও বিচারকার্য এখনও শেষ হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ না আসলে এতদিনে হয়তো রায় ঘোষণা করতেন আদালত। তবে তারা আশাবাদী যে, পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই মামলাটির বিচারকার্য শেষ হবে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে মামলাটির ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে সাফাই সাক্ষী গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল সাফাই সাক্ষীর জন্য তারিখ ধার্য থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে তা আটকে যায়।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্টপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা সারাবাংলাকে জানান, মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে সাফাই সাক্ষী পর্যায়ে এসে থেমে গেছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর নিম্ন আদালতের সব পুরাতন মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এজন্য আবরার হত্যা মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ স্বাভাবিক হলে ফের মামলার কার্যক্রম শুরু হবে। মামলাটির শুরু থেকে বিচারকার্যে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো গাফিলতি নেই। শুরু থেকেই রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে।

এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরাও চাই যে দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ হোক। প্রকৃতিপক্ষে যারা দোষী তাদের সাজা হোক, আর যারা নির্দোষ তারা খালাস পাক। করোনাভাইরাসের কারণে বিচারকার্য বন্ধ রয়েছে। এতে করে নির্দোষীরাও জেল কাটছেন।’

বিজ্ঞাপন

আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এখনও আদালতে বারান্দায় দৌড়-ঝাঁপ করতে হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তারা চেষ্টা করছে মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়। কিন্তু করোনা এসে সব থামিয়ে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ না এলে হয়তো এতদিনে ছেলে হত্যার বিচার পেয়ে যেতাম। আশা করি করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলে দ্রুত মামলার কার্যক্রম শেষ করবেন আদালত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবরারের মা ছেলেকে হারিয়ে অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। আগের মতো আর মানুষের সঙ্গে কথা বলে না। সবসময় চুপচাপ থাকে। কিছুদিন আগে এক আত্মীয়ের বিয়েতে যাওয়ার কথা থাকলেও যায়নি। কারণ ছেলে ছাড়া তার কোনো কিছু ভালো লাগবে না।‘

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারনামীয় ১৯ জন এবং তদন্তেপ্রাপ্ত এজাহারবহির্ভূত ছয়জন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন ও এজাহার বহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু। চার্জশিট ভুক্ত পলাতক তিন আসামিরা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। গত ১৩ জানুয়ারি আবরার হত্যা মামলার নথিটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ পাঠানোর আদেশ দেন। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। মামলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে সাফাই সাক্ষী চলছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এআই/পিটিএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন