Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ ক্রীড়া স্কুল তৈরি: ৩ বছরের প্রকল্প ঠেকছে ৯ বছরে, বাড়ছে ব্যয়ও

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ অক্টোবর ২০২১ ১০:০৫

ঢাকা: লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ২০১৫ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু তিন বছরের এই প্রকল্প গিয়ে ঠেকছে নয় বছরে। ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওতায় চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ক্রীড়া স্কুল প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে ঘটছে এমন ঘটনা। এজন্য ফের তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

প্রকল্পটি অনুমোদনের পর চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ কোটি ২০ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি ৫০ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। তবে তৃতীয় সংশোধনীতে মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে আরও দুই বছর এবং ব্যয় বাড়ছে ৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেও প্রকল্পটি শেষ হবে কি না তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ৪৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ২ লাখ ৯৯ হাজার ২৭৯ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ১ হাজার ৯৬০ বর্গমিটার প্রশাসনিক ভবন, ৫ হাজার ৮৮৮ বর্গমিটার প্রশিক্ষণার্থী হোস্টেল ভবন, ২ হাজার ৫৫০ বর্গমিটার অফিসার্স কোয়ার্টার, ১ হাজার বর্গমিটার ডরমেটরি ভবন, ২ হাজার ৩৯৮ বর্গমিটার মাল্টি স্পোটস ইনডোর ভবন, এক হাজার ৬৮০ বর্গমিটার একাডেমিক ভবন, ২৩০ বর্গমিটার প্যাভিলিয়ন ভবন এবং ৩ হাজার ৯৫৪ লাখ ঘনমিটার পিচসহ ফুটবল ও ক্রিকেট মাঠ তৈরি করা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় হতে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)।

বিজ্ঞাপন

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাত্র দুটি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রকল্প কেন এতদিন লাগবে? বাস্তবায়ন দেরি হওয়ায় যেমন জনগণের অর্থের অপচয় হচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে অপারচুনেটি কস্ট। অর্থাৎ এই প্রকল্পটি যদি সময়মতো বাস্তবায়িত হতো, তাহলে এখানে যারা অধ্যায়ন করতো তাদের দক্ষতা বাড়তো। তারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারতো। কিন্তু সেসব সুযোগ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকল্পটি আরও গভীরভাবে মনিটরিং করা উচিত।’

প্রকল্প প্রস্তবনায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী অঞ্চলের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের উন্নত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার আওতায় আনতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তাদের পাঠাতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। মূল প্রকল্পটি মোট ৮৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং মেয়াদকাল এক বছর বৃদ্ধি করে প্রথম সংশোধনী আনে। এরপর প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় আরও বাড়িয়ে ১৩০ কোটি টাকা এবং মেয়াদকাল তিন বছর বৃদ্ধি করে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। যেটিতে ২০১৯ সালের ৯ জুলাই অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির রাজশাহী অংশের জন্য কৃষি জমির পরিবর্তে অকৃষি জমি নির্বাচন করায় ভূমির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেজন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকল্পের কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি। সে কারণে প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ফের বাড়িয়ে ১৬২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং আরও ২ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে তৃতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধিঃ প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রকল্পের রাজশাহী অংশের ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ খাতে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করে তৃতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে আরও বলা হয়েছে, প্রশাসনিক ভবন, প্রশিক্ষণার্থী হোস্টেল ভবন, অফিসার্স কোয়ার্টার, ডরমেটরি, মাল্টি-স্পোর্টস ইনডোর ভবন, একাডেমিক ভবন, প্যাভিলিয়ন ভবন নির্মাণ এবং রাস্তা, সাব স্টেশনসহ এরিয়া লাইটিং, পিচসহ ফুটবল ও ক্রিকেট মাঠ, সীমানা-প্রাচীর, সার্ফেস ড্রেন তৈরি অঙ্গগুলোর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য তৃতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী অংশের ভূমি অধিগ্রহণ এবং সার্বিকভাবে অন্যান্য কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য দুই বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভালোমানের ক্রীড়াবিদ হিসেবে গড়ে তোলা বিকেএসপির মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে ক্রিকেটসহ প্রায় সব খেলায় বিকেএসপির শিক্ষার্থীরা সুনামের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী অঞ্চলের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের উন্নত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার আওতায় আনা যাবে। এতে করে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্রীড়া-প্রশিক্ষণ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত খেলোয়াড় তৈরি, খেলোয়াড়দের দক্ষতা বৃদ্ধি, খেলাধুলার বিকাশ সাধন এবং মান উন্নয়ন- সর্বোপরি আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্রীড়া উন্নয়নে গুরুত্ব ও ভূমিকা বিবেচনায় প্রকল্পের অসম্পূর্ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধন প্রস্তাবটি অনুমোদনযোগ্য।’

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কোস্ট গার্ডের নতুন ডিজি জিয়াউল হক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩২

সম্পর্কিত খবর