Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘তুমি’ বলায় জুনিয়রকে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ

কুবি করেসপন্ডেন্ট
১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৭:১৫

ঢাকা: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে ১২তম ব্যাচের চার শিক্ষার্থী কর্তৃক ১৩তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে চেয়ারের সাথে বেঁধে বেল্ট দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। এরই জেরে মধ্য রাতে দুই ব্যাচের মধ্যে মারামারি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থতি ঠান্ডা করার নামে দফায় দফায় মারধর করা হয়েছে।

বিবাদমান পক্ষকে বিচারের নামে প্রথমে ৩০৩ নম্বর কক্ষে পরে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদের কক্ষে (৩০১) নিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত পাঁচ কর্মী চোট পান বলে জানা গেছে, তবে কেউ গুরুতর আহত হননি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিবাদমান দুই পক্ষের কর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী রিয়াজুল ইসলাম বাঁধন ১২ তম ব্যাচের সোহাগ নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে। যার ফলে ১২ তম ব্যাচের সোহাগ, শাফী, ওয়াকিল, আবিরসহ কয়েকজন বাঁধনকে হলের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করে।

মারধরের শিকার বাঁধন জানায়, সোহাগ ভাই এর নাম বলায় শাফী ভাই, সোহাগ ভাই, আবির ভাই, ওয়াকিল ভাইসহ কয়েকজন আমাকে নিয়ে চেয়ারের সঙ্গে গামছা দিয়ে বাঁধে। পরনে থাকা বেল্ট দিয়ে আমাকে অনেক মারে। আমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর বন্ধুরা আমাকে গাড়িতে তুলে দিলে আমি হল থেকে বাড়ি চলে আসি।

তবে এই মারধরের কথা অস্বীকার করে ১২ তম ব্যাচের ওয়াকিল আহমেদ জানান, তাকে রুমে নিয়ে মারধরের প্রশ্নই আসে না। সিনিয়রের নাম ধরে ডাকায় হলের বারান্দায় তাকে শাসানো হয়েছিল।

এ অভিযোগের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে আবির ও সোহাগকে ফোন করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি।

এরপর বাঁধনকে শাসানোর জেরে বৃহস্পতিবার রাতে ১১টার দিকে ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাফীকে ২০০৪ নং কক্ষে দরজা আটকে মারধর করে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। শাফীকে মারধরের খবর পেয়ে তার বন্ধুরা রুমের দরজা ভেঙে শাফীকে উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে শাফী বলেন, ‘তারা সিনিয়রদের গায়ে হাত তুলেছে, সাংগঠনিক একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। দত্ত হলের ইতিহাসে যা কোনোদিন হয়নি, তারা তা করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তারা হলে থাকার যোগ্য না। আমি তাদের বুঝাতে গিয়েছিলাম তারা আমাকে মারধর করেছে। ইলিয়াস ভাই, মাজেদ ভাই (শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) সাংগঠনিকভাবে যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা তা মেনে নেব।’

অন্যদিকে ১৩ তম ব্যাচের অন্তত চারজন কর্মী বলেন, ‘আমরা কাউকে মারধর করিনি। শুধু বন্ধুকে মারধরের কারণ জানতে ওই কক্ষে গিয়েছিলাম। কথা কাটাকাটি থেকে পরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।’

এই ঘটনায় দুই ব্যাচ মারমুখী হয়ে উঠলে শাখা ও দত্ত হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে সংঘর্ষে লিপ্ত দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এলোপাতাড়ি মারধর করে। এরপর বিচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের কক্ষে নিয়ে গিয়ে সেখানেও মারধর করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন কর্মী চোট পায়।

এ বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফিউল আলম দীপ্ত বলেন, ‘আমি জেনেছি কথা-কাটাকাটির জেরে দুই ব্যাচের মাঝে উচ্চবাক্য বিনিময় হয়। পরবর্তীতে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংগঠনিকভাবে তাদেরকে মিটমাট করে দিয়েছি।’

দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির এমন ঘটনাকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘এ ঘটনাটি ঘটেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ম্যাচিউরিটির অভাবে। ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেয়াদবি করবে সেটি অপ্রত্যাশিত।’

তার কক্ষে নিয়ে বিচারের নামে মারধরের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সংগঠন অনেক বড়। আমরা একটি পরিবারের মতো। এখানে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হলে আমরা তা সমাধান করি। আজকেও আমরা সমাধান করেছি। অপরাধের মাত্রা বুঝে সামনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ জুলহাস মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি বিব্রত। ঘটনাটির বিস্তারিত জেনে আমি ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি। হলের বিষয়গুলো হল প্রভোস্ট দেখেন। প্রভোস্ট আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/একে

কুমিল্লা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় মারধর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর