দোষারোপের রাজনীতি বাদ দিয়ে সহিংসতার বিচার করুন: টিআইবি
১৯ অক্টোবর ২০২১ ২০:২০
ঢাকা: কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ছয় জন নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রাজনৈতিক দোষারোপের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসে এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ জীবন-জীবিকার ওপর প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিলো। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর শতাধিক মামলায় কয়েক হাজার আসামি করা হলো। অথচ চিরাচরিত রাজনৈতিক দোষারোপের বাইরে প্রকৃত অপরাধী চিহ্নিত হলো না।’
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার পূর্ববর্তী সব সহিংসতাতেও আমরা একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাই। এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে চলে যায় এবং নিয়মিত বিরতিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটতেই থাকে।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিগত এক দশকে তিন হাজারেরও অধিক সহিংস হামলায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের দেড় হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, প্রতিমা, পূজা মণ্ডপ ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটা ঘটেছে। এর একটি ঘটনাতেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির তথ্য পাই না। সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিই হামলাকারীদের আরো উসকে দিচ্ছে এবং সাম্প্রদায়িকতার বীজ জিইয়ে রেখেছে।’
‘সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা চিরতরে নির্মূল করে সহিংসতার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ অসম্ভবই রয়ে যাবে,’— বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
২০০১ সালের নির্বাচনের অব্যহতি পরে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা তদন্তে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট গঠিত শাহাবুদ্দিন কমিশন ২০১২ সালে বেশকিছু সুপারিশসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল, প্রায় এক দশক পরও কেন তা প্রকাশ করা হলো না— প্রশ্ন টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের।
তিনি বলেন, ‘এই কমিশন প্রায় ১৮ হাজার সহিংসতার ঘটনার বিপরীতে জমা পড়া পাঁচ হাজর ৫৭৯টি অভিযোগের মধ্যে তিন হাজার ৬২৫টি অভিযোগের তদন্ত করে ১ হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার যে বিশাল প্রতিবেদন জমা দিলো, আমরা এখনো জানতেও পারলাম না সেখানে কী সুপারিশ ছিল! আমরা মনে করি, এ ধরনের প্রতিটি ঘটনাতে তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করার চর্চা বাদ দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে আন্তরিকভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করার এখনই সময়।’
সাম্প্রতিক ঘটনায় জড়িত সবার কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিতের পাশাপাশি দেশে ভবিষ্যতে যেন আর এমন জঘন্য অপরাধ সংঘটিত না হয়, সেজন্য সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর