চট্টগ্রামে মিলাদুন্নবির শোভাযাত্রা থেকে ‘শান্তি ও মানবতার’ ডাক
২০ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৩৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মুসলমান সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদে মিলাদুন্নবি উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় লাখো মানুষের সম্মিলন ঘটেছিল। শোভাযাত্রা ও ধর্মীয় সম্মেলন থেকে শান্তি ও মানবতার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল পৌনে ৯টায় নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা থেকে সম্মিলিত শোভাযাত্রা শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রদেশের সিরিকোট দরবার শরীফের উত্তরাধিকার সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ।
শোভাযাত্রা নগরীর বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট ঘুরে ফের মুরাদপুর বিবিরহাট প্রদক্ষিণ করে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন ধর্মীয় সম্মেলনের ময়দানে ফিরে আসে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের বাইরের জেলা থেকে কাউকে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেছিলেন আয়োজকরা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকে লাখো মানুষ এসে সমবেত হন এই সম্মিলনে।
মিলাদুন্নবির ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, তোরণ দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নগরীর বিভিন্ন স্পটে সড়ক বিভাজকগুলোকে। অংশগ্রহণকারীদের হাতে হাতেও ছিল ব্যানার-ফেস্টুন। হামদ, নাত ও দরুদে মুখর ছিল শোভাযাত্রা।
সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহন ছিল তুলনামূলকভাবে কম। এরপর শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নগরীর সংশ্লিষ্ট এলাকা ও সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল সীমিত করে পুলিশ। নগর পুলিশের উপকমিশনার (জনসংযোগ) আরাফাতুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে জশনে জুলুস হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য পুরো নগরীতে মোতায়েন ছিল।’
আয়োজক সংগঠন আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৭৪ সাল থেকে ঈদে মিলাদুন্নবিতে চট্টগ্রামে জশনে জুলুছ (শোভাযাত্রা) হয়ে আসছে। আমাদের এবারের বার্তা হচ্ছে— শান্তি ও মানবতা। আল্লাহ তার রাসুলকে (সা.) দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন রহমত হিসেবে। এই রহমত শুধু মুসলমানের জন্য নয়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানসহ সমগ্র মানবজাতির জন্য। মানবতাই হচ্ছে বড় ধর্ম। দাঙ্গা, হাঙ্গামা, আগুন, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর— এসব ইসলামে নেই। আমাদের হুজুরও বলেছেন, আমান বা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি মানবতা ও শান্তির ডাক দিয়েছেন।’
শোভাযাত্রা শেষে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা মাঠে মিলাদ মাহফিল শুরু হয়। সেখানে জোহরের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এছাড়া দোয়া-মোনাজাত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
এদিকে ঈদে মিলাদুন্নবি উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সকালে নগরীর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠান হয়েছে।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সমাজকল্যাণ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি আবদুস সালাম মাসুম, চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, উপসচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু, উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী, সিবিএ সভাপতি ফরিদ আহমদ ছিলেন।
বক্তারা বলেন, ‘আমাদের দেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয়েছে তলোয়ারের তেজে নয়, সুফিবাদদের শান্তির বার্তা দিয়ে। তাই ইসলাম সাম্য, সহনশীলতা, সম্প্রীতি ও সোহার্দ্যের প্রতিরূপ। সামগ্রিক অর্থে ইসলাম মানবতার ধর্ম দর্শন।’
সারাবাংলা/আরডি/টিআর