মাঝে মাঝেই কিছু ঘটনা ইচ্ছা করেই ঘটানো হচ্ছে: শেখ হাসিনা
২৪ অক্টোবর ২০২১ ১৪:০১
ঢাকা: বাংলাদেশকে আর কখনোই কেউ পেছনে টানতে পারবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর মাঝে কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটছে, ঘটানো হচ্ছে, ইচ্ছা করেই ঘটানো হচ্ছে; এটি আপনারা নিজেরাই টের পান। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং সেইসাথে অপপ্রচার চালানো হয়।
রোববার (২৪ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে পায়রা সেতু, দুমকি, পটুয়াখালী প্রান্তে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত ‘পায়রা সেতু’ উদ্বোধন করা হয়েছে।
এ ছাড়া একই অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-তামাবিল মহাসড়ক উভয় সড়কে পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৬-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প দু’টির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই পায়রা সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াতের পথ খুলে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজও সমাপ্ত। আমাদের মাননীয় সেতুমন্ত্রী বলেছেন আগামী বছরেই এটি চালু হবে। কাজেই পদ্মা সেতু চালু হলে পরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর কোনো কষ্ট থাকবে না। সেই অঞ্চলের অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে আমরা অন্যান্য সেতুগুলো করে ফেলছি। যেন এই অঞ্চলটা উন্নত হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী সিলেটের সার্বিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং প্রবাসীদের বিভিন্ন অবদানের কথাও স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘যোগাযোগটা হলে পরে আমাদের দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। বাংলাদেশকে আসলে অনেকেই এমনভাবে দেখেছে যে, দেশ স্বাধীন হলে কী হবে? দেশকে বোধহয় এগিয়ে যাবে না!’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পরেই বাংলাদেশকে আরো ধ্বংস করার জন্য একের পর এক ডাইরেক্ট-ইনডাইরেক্ট, সরাসরি বা কোন লেবাস পরে, কখনো অন্য লেবাসের উর্দি পরে যারা এই দেশকে পরিচালনা করেছে ২১ বছর; এরপর ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত, বাংলাদেশের উন্নয়নটাকেই তারা থামাতে চেয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে একটা মর্যাদা পাবে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারবে এটাই যেন তারা চাইত না বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য খুব কষ্ট হত। যখনই দেশের বাইরে যেতাম বিদেশে যেতাম বাংলাদেশ বললেই ঝড় বন্যা জলোচ্ছ্বাস দুর্ভিক্ষের দেশ বলা হতো।’
‘তো আল্লাহর রহমতে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকারে আসার পর ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি; এই পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে আজকে বাংলাদেশকে আর কেউ হেয় করে দেখতে পারে না। আজকে বাংলাদেশের নাম বললে সকলেই সম্মান করে এবং বাংলাদেশ সারা বিশ্বে আজকে একটা মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে’ বলে দাবি করেন টানা মেয়াদে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
এ জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীসহ তার দল এবং সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, কাজ করেছেন তাদের সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর কখনোই কেউ পেছনে টানতে পারবে না। এর মাঝে কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটছে, ঘটানো হচ্ছে ইচ্ছা করেই ঘটানো হচ্ছে; এটা আপনারা নিজেরাই টের পান। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং সেইসাথে অপপ্রচার চালানো হয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যতই উন্নতি করি, ভালো কাজ করি একটা শ্রেণিই আছে বাংলাদেশের বদনাম করতেই তারা ব্যস্ত। তারা কী চায়? তারা এদেশে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক, সেটা তারা চায় না! একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে পরে তাদের একটু কদর বাড়ে। তারা এই উন্নয়নটা দেখে না বরং ধ্বংস করতে চায়, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।’
করোনার টিকা দেশবাসী সকলকেই দেওয়া হবে এবং সবার নিরাপদ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রসঙ্গও পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাবে। আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এরইমধ্যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ডেল্টা প্ল্যানসহ তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করার কথাও পুনরায় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যদি একটু ব্রিজটার ওপর হাঁটতে পারতাম!
আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন দৃষ্টিনন্দন পায়রা সেতু দেখতে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি একটু ব্রিজটার ওপর হাঁটতে পারতাম। তবে সত্যি খুব ভালো লাগতো।
সশরীরে পায়রা সেতু দেখতে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেই আপনাদের সঙ্গে গণভবনে বসেও কথা বলতে পারছি, মিলিত হতে পারছি।’
‘তবে এটি ঠিক যে আমি যদি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারতাম, পায়রা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারতাম বা সেতুতে নেমে যদি একটু দাঁড়াতে পারতাম, পায়রা নদীটা দেখতে পারতাম। যে নদীতে আমি সব সময় স্পিডবোটে চড়েছি সেই নদীর ওপরের ব্রিজে যদি হাঁটতে পারতাম। তবে সত্যি খুব ভালো লাগতো। ’
করোনা পরিস্থিতির কারণে যেতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু করোনার কারণে আসলে এক প্রকার বন্দি জীবন, সে জন্য আর সেটা হলো না।’
তবে আমার আকাঙ্ক্ষা আছে একদিন গাড়ি চালিয়ে সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন এ নতুন সেতুটা দেখতে যাব অবশ্যই।
বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর উপর এ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪৪৭ দশমিক ২৪ কোটি টাকা। এ সেতু ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল ও ঝালকাঠির সঙ্গে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলাকে সরাসরি সড়ক পথের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ফলে মাওয়া বা আরিচা থেকে পায়রা বন্দর ও সাগরকন্যা কুয়াকাটায় যেতে আর কোনো ফেরির প্রয়োজন হবে না।
১৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটির প্রস্থ ১৯.৭৬ মিটার। আর সেতুর সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৬৮ মিটার এবং প্রস্থ ২২.৮০ মিটার। এ সেতুতে ৩২টি স্প্যান ও ৩৩৮টি পাইল রয়েছে। যার মধ্যে মূল সেতুর পাইল সংখ্যা ৫২টি। আর এ সেতুর গভীরতম পাইলের দৈর্ঘ্য ১৩০ মিটার, যার সংখ্যা ৪০টি। এছাড়া পিয়ার সংখ্যা ৩১টি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক উপস্থিত ছিলেন ।
অপরদিকে বরিশাল প্রান্তে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান মিয়া, পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা, পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমান, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, বরিশাল-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতনা, সংরক্ষিত ২৯ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে