পদ্মাসেতুতে পিচ ঢালাই শুরু, শেষ হতে লাগবে ৩-৪ মাস
৩০ অক্টোবর ২০২১ ১০:৩১
ঢাকা: মূল পদ্মাসেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৩-৪ মাস। ফলে পিচ ঢালাই শেষ হলেই স্বপ্নের পদ্মাসেতুতে যানবাহন চলাচলের উপযোগী হবে। এরপর সেতুর রংয়ের কাজ, চারপাশের ওয়াল এবং আলোকসজ্জা শেষ হলেই উদ্ধোধন হবে কোটি মানুষের স্বপ্নের সেতু পদ্মাসেতু।
এদিকে সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল সেতুর অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আর নদীশাসনের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
পদ্মাসেতুর সার্বিক অগ্রগতি বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো শফিকুল ইসলাম রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেতুর কাজের অগ্রগতি বিষয়ে বৃহস্পতিবার পরিদর্শনে যায়। পুরোদমে সেতুর কাজ চলছে। মূল পদ্মাসেতুর পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এটি শেষ হতে ৩-৪ মাস সময় লাগবে। এছাড়া অন্যান্য যেসব কাজ রয়েছে সেগুলোও পুরোদমে এগিয়ে চলেছে কাজ।’
পিচ ঢালাইয়ের কাঠামো এবং কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘দেখুন পদ্মাসেতু অন্যান্য সেতু থেকে আলাদা। এখানে সবকিছু এমনভাবে করা হচ্ছে যেন কোন কথা না ওঠে এটি নিয়ে। এর প্রতিটি কাজ সূক্ষ্ণভাবে করছে কলাকৌশলীরা। পদ্মাসেতুর যে স্টিলের কাঠামো রয়েছে তার ওপর কংক্রিটের স্ল্যাব বসানো হয়েছে। আর এটির ওপর দিয়ে যানবাহর চলবে। আর এই স্লাবের ওপর এখন ১০০ মিলিমিটার পুরো করে পিচ ঢালাই হচ্ছে। আমরা পিচ ঢালাইয়ের কাজ ২ ভাগে ভাগ করে করছি। প্রথমে যে কংক্রিটের ওপর ৪ মিলিমিটার স্তর করা হচ্ছে এরপর তারওপর পাথর,সিমেন্টসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে কয়েকস্তরের পিচ ঢালাই হবে। এটির অনেকগুলো স্তর রয়েছে। সবমিলে রাস্তা হবে।’
এর আগে গত ২৩ আগস্ট স্বপ্নের পদ্মাসেতু রূপ পায় পূর্ণাঙ্গ সড়ক পথের। এর মধ্য দিয়ে পদ্মাসেতুতে সড়ক পথের সবকয়টি স্লাব বসানো শেষ হয়। পদ্মাসেতু দিয়ে যানবাহন চলতে প্রয়োজন ছিলো যে পিচ ঢালাইয়ের সেটাও অবশেষে শুর হলো।
পদ্মাসেতুতে রোডস্লাব বসানোর কাজ করা হয় ৪টি ভাগে ভাগ করে। ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ থেকে পদ্মাসেতুতে রোড স্লাব বসানোর কাজ শুরু হয়। পদ্মাসেতুতে ২ হাজার ৯১৭টি রোড স্লাব বসানো হলো। পদ্মাসেতুর সড়ক পথ তৈরিতে প্রায় ২২ মিটার দীর্ঘ এবং ২.১০ মিটার চওড়া রোড স্লাব ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া গত ২০ জুন শেষ হয় সেতুর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। এদিন সেতুতে বসে যায় ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব। আর গত ১৯ আগস্ট পদ্মাসেতুতে গ্যাস লাইস বসানোর কাজ শুরু হয়। এই কাজও খুব দ্রুত শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে পদ্মা সেতু এবং এর দুই প্রান্তে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন বসাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আলাদা একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া পদ্মাসেতুতে থাকবে দুই ধরনের আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। একটি যানবাহনের চলার পথ আলোকিত করতে স্ট্রিট লাইটিং, অন্যটি কোন উৎসব কিংবা জাতীয় কোনো দিবসে পুরো সেতু নানা রঙে আলোকসজ্জা করার স্থায়ী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাকে আর্কিটেকচারাল লাইটিং বলা হচ্ছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মাসেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মাসেতুর কাঠামো। প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
সারাবাংলা/এসজে/একে
চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্মাসেতু পিচ ঢালাই সিনো হাইড্রো করপোরেশন