Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪৪ জেলায় নেই দুদকের কার্যালয়, ২শ কর্মকর্তার কাঁধে ৫৫০০ ফাইল

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ নভেম্বর ২০২১ ১০:১৫

ঢাকা: ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে যাত্রা শুরু হয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। ২০০৪ সালের যদিও দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সময় দেশের ৬৪ জেলাতে কার্যালয় ছিলেন দুদকের। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন হওয়ার পর দুদকের সবগুলো জেলা থেকে গুটিয়ে ২২ জেলায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় করা হয়।

বর্তমানে প্রধান কার্যালয় ছাড়া দুদকের যে কয়েকটি জেলায় কার্যক্রম চলছে সেগুলো হচ্ছে, সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১, সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়- ১, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়- ২, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, হবিগঞ্জ, বরিশাল, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, যশোর, কুমিল্লা, বরিশাল ও পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়।

বিজ্ঞাপন

দুদকের হিসাব বলছে- বর্তমানে দুদকের প্রধান কার্যালয় (সেগুনবাগিচা), ৬টি বিভাগীয় কার্যালয় এবং ২২টি জেলা কার্যালয়ে পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক এবং উপসহকারী পরিচালক রয়েছেন ২৭৩ জন। এদের মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ করছেন মাত্র ২০০ কর্মকর্তা। এ সব কর্মকর্তার হাতে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি অনুসন্ধান ও তদন্তের ফাইল রয়েছে। ফলে প্রতি কর্মকর্তাকে ২৭টির বেশি ফাইল অনুসন্ধান এবং তদন্ত করতে হচ্ছে। এ ছাড়া দুদকের প্রথম শ্রেণিসহ চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে পদ রয়েছে ২ হাজার ১৪৬টি কিন্তু কমিশনে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ২৬জন। এমনকি বাকি ৪৪ জেলায় দুদকের কোনো কার্যালয় নেই। ফলে প্রান্তিক পর্যায় থেকে অভিযোগ এলেও জনবলের অভাবে আমলে নিতে পারে না কমিশন।

বিজ্ঞাপন

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ৫ হাজারের বেশি দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে মাত্র দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাত্র দুই শতাধিক কর্মকর্তা। প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম জনবল দিয়ে চলছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রম। এমনকি অনেক জেলা থেকে দুদকের কার্যক্রমও গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে জনবলের অভাবে। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক অভিযোগ আমলে নিতে পারছে না কমিশন।

অপরদিকে দুদকের কার্যক্রমে আরও বেশি গতিশীল করতে ২০১৮ সালের কমিশনের এক বৈঠকে নতুন করে ১৪টি কার্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলোর বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো কিছুই জানা যায়নি। এদিকে নতুন করে যে জেলাগুলোতে দুদকের কার্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, ঢাকা পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর। এছাড়া আরও অনুমোদন দেওয়া হয় গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, চাঁদপুর, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পিরোজপুর এবং হবিগঞ্জ কার্যালয়ের।

অপরদিকে দুদকের অর্গানুগ্রাম অনুযায়ী কমিশনের পদ সংখ্যা রয়েছে। একজন চেয়ারম্যান (কর্মরত), কমিশনার ২জন (কর্মরত), সচিব ১ জন (কর্মরত), মহাপরিচালক ৮ জন (কর্মরত রয়েছেন ৫ জন শূন্য পদ রয়েছে ৩টি), পরিচালক ২৯ জন (কর্মরত রয়েছেন ২২ জন আর শূন্য পদ রয়েছে ৭টি), সিস্টেম এনালিস্ট ২জন (কর্মরত রয়েছেন ১জন), একান্ত সচিব (চেয়ারম্যান ও কমিশনার) এর ৩টি পদ রয়েছে ৩ জনই কর্মরত রয়েছেন, একান্ত সচিব (কমিশনের সচিবের) পদ রয়েছে ১টি বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। উপপরিচালক পদ রয়েছে ১৪৭টি (কর্মরত রয়েছেন ৫২ জন আর শূন্য পদ রয়েছে ৯৫টি), প্রোগ্রামার/সহকারী সিস্টেম এনালিস্ট পদ রয়েছে ২টি (কর্মরত রয়েছেন ১ জন আর শূন্য পদ রয়েছে একটি), প্রসিকিউটর পদ রয়েছে ১০টি (১০টি পদই শূন্য রয়েছে), মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার পদ রয়েছে ১টি (কর্মরত রয়েছেন), সহকারী পরিচালকের পদ রয়েছে ২১৫টি (কর্মরত রয়েছেন ৫৭ জন আর শূন্য পদ রয়েছে ১৫৮টি)।

এ ছাড়া সহকারী প্রোগ্রামার পদ রয়েছে ৪টি (পদগুলো শূন্য রয়েছে), মেডিকেল অফিসার পদ রয়েছে ১টি (কর্মরত রয়েছেন), সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার পদ রয়েছে ২টি (জনবল শূন্য), প্রোটোকল অফিসার পদ রয়েছে ১টি (বর্তমানে পদ শূন্য),সহকারী পরিচালক (ইলেকট্রিক্যাল) পদ রয়েছে ২টি (পদগুলো শূন্য), উপসহকারী পরিচালক পদে পদ রয়েছে ২০৫টি (বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ২৭ জন আর পদ শূন্য রয়েছে ১৭৮টি), কোর্ট পরিদর্শক পদে ১০টি পদ থাকলেও সেগুলো শূন্য রয়েছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তার দুটি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন একজন।

শুধু তাই নয় কমিশনে, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, কম্পিউটার অপারেটর, নার্স, ফার্মাসিস্ট, প্রধান সহকারী, সহকারী পরিদর্শক, সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটলিপিকার-কাম কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী/সহকারী,কোর্ট সহকারী (এএসআই), ডাটা এন্ট্রি/ কন্ট্রোল অপারেটর, ড্রাইভার, ডেসপাচ রাইডার, নিরাপত্তারক্ষী, অফিস সহায়ক, যানবাহন ক্লিনার ও গার্ড পদে অসংখ্য জনবলের পদ ফাঁকা রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘একজন কর্মকর্তার ওপর যদি বেশি চাপ থাকলে তাহলে কাঙ্ক্ষিত কাজ পাওয়া যায় না। ফলে কর্মীদের ওপর চাপ কমাতে হবে। দুদকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের জনবল ঘাটতি দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। কেননা দুদকের ওপর সবার নজর। দুর্নীতি রোধ এবং সুশাসন নিশ্চিতে দুদকের আরও ভালো কাজ করতে হবে। দুদকের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আশা করি দায়িত্বশীল যারা রয়েছেন তারা বিষয়টি সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।’

দুর্নীতি দমন কমিশন কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকার বাইরে অফিস করতে যেসব প্রক্রিয়া রয়েছে সেগুলোর কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া কিছু নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। খুব দ্রুতই কিছু জনবল আমরা নিয়োগ দেব এবং তারা যোগদানও করবে। অপরদিকে কমিশনে যেসব শূন্য পদ রয়েছে সেগুলো পূরণ করার জন্য কাজ করা হবে। কিছু সময় পর পর আমরা নিয়োগ দেব।

তিনি আরও বলেন, ‘একজন কর্মকর্তার কাছে যদি একাধিক তদন্ত কিংবা অনুসন্ধান থাকে তাহলে কাজের গতি ধীর গতিতে চলে। কিন্তু জনবল বাড়ানোর ফলে সেগুলো যদি ভাগ করে দেওয়া যায় তাহলে কাজের গতি দ্বিগুণ হয়। আমরা সেই কাজটিই করতে চাই জনবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান। তাই এগুলো আস্তে আস্তে সমাধান হবে।’

সারাবাংলা/এসজে/একে

দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর