Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারী ইউএনওরা প্রতিবন্ধকতার শিকার, উত্তরণে ৮ সুপারিশ টিআইবি’র

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ নভেম্বর ২০২১ ১৯:২০

ঢাকা: উপজেলা প্রশাসনের প্রধান হিসেবে নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, এ ক্ষেত্রে এসব কর্মকর্তাকে রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাব মোকাবিলা করতে হচ্ছে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকি, কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নেতিবাচক ধারণা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসহযোগিতার মুখে পড়তে হয় তাদের। শুধু তাই নয়, শারীরিকভাবে লাঞ্ছনারও শিকার হতে হয় নারী ইউএনওদের। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা উত্তরণে টিআইবি আট দফা সুপারিশ করেছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) ‘স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উপজেলা নারী নির্বাহী কর্মকর্তার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি এসব প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেছে। এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সাবেক ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ শারমীন এবং তত্ত্বাবধানে ছিলেন একই বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ও সাবেক সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্‌জুর-ই-আলম।

টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সারাদেশের ৪৮৫টি উপজেলার মধ্যে ১৪৯টি উপজেলায় কর্মরত নারী ইউএনওকে জরিপের জন্য প্রশ্নপত্র ইমেইলে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৪৫ জন জরিপে অংশ নেন। গুণগত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য মুখ্য তথ্যদাতা হিসেবে নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা পর্যায়ে অন্যান্য সরকারি অফিসের কর্মকর্তা, প্রশাসন ক্যাডারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সরাসরি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

গবেষণার ফলে দেখা যায়, মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন কাজের পরিদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সামাজিক ধ্যানধারণা ও শক্তিশালী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অভাবের কারণে নারীরা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েন।

বিজ্ঞাপন

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদে সাচিবিক সহায়তা দিতে গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী ইউএনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আসা অবৈধ আর্থিক সুবিধা অনুমোদন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। জরিপে অংশ নেওয়া ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ইউএনও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে অনিয়ম করতে চাপ প্রয়োগের কথা জানিয়েছেন। এর ফলে অতিরিক্ত ত্রাণ সামগ্রীর জন্য সুপারিশ করতে বাধ্য হতে হয় বলে জানিয়েছেন ২০ শতাংশ ইউএনও।

এছাড়া, ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যয়ের যথার্থতা যাচাই না করতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ, ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভুয়া ব্যয়ের বিল অনুমোদন এবং ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ নারী ইউএনও উপজেলা পরিষদের ক্রয় সংক্রান্ত কাজে অনিয়ম করতে বাধ্য করা হয় বলে উল্লেখ করেছেন।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ নারী ইউএনওকে কার্য সম্পাদনে সহকর্মীদের পক্ষ থেকে এবং ৪০ দশমিক ৫ শতাংশকে উপজেলা চেয়ারম্যানের অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ ইউএনও দুর্নীতিবিরোধী কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, সমসংখ্যক ইউএনও বিভিন্ন মহল থেকে অনৈতিক কাজের জন্য চাপ, ৩১ শতাংশ রাজনৈতিক প্রভাব এবং ২৫ দশমিক ৭ শতাংশকে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজে বাধার মুখে পড়তে হয়।

এছাড়া উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ইউএনও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের দফতরের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন ৩১ শতাংশ ইউএনও। এর বাইরেও ৭ দশমিক ১০ শতাংশ ইউএনও জেলা প্রশাসন থেকে যথাসময়ে সহযোগিতা না পাওয়া ও ১১ দশমিক ৯ শতাংশ ইউএনও ওপর মহলের (স্থানীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, সচিব) প্রভাব খাটানোর কথা উল্লেখ করেছেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রশাসনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ জেন্ডার সংবেদনশীল নয়। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক। নারী ইউএনওকে একজন মানুষ বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে না দেখে মূলত নারী হিসেবে দেখার প্রবণতা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। সমাজে প্রভাব সৃষ্টিকারী মহলের নারীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব এবং নারী মাত্রই পুরুষের তুলনায় কম দক্ষ— এমন মানসিকতাই নারী ইউএনওদের বিভিন্ন প্রকার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে।

গবেষণা অনুযায়ী সাংবাদিকদের কারণেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী ইউএনওরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সাংবাদিকতার অনেক ভালো দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগসাজশে স্থানীয় সাংবাদিকরা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় সাংবাদিকদের পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা বা অন্যান্য সুবিধা না পাওয়া এবং তাদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের মতো বিষয়ও কাজ করে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

কাজে প্রতিবন্ধকতা টিআইবি নারী ইউএনও

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর