পরিবহন ধর্মঘটে কমলাপুরে উপচে পড়া ভিড়
৬ নভেম্বর ২০২১ ১৭:০৯
ঢাকা: জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে মালিকদের ডাকা সারাদেশে দ্বিতীয় দিনের মতো গণ ও পণ্য পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ যাত্রীরা কোনো উপায় না পেয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনে ভিড় করছেন। সিট না থাকলেও দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। ট্রেনে বাড়তি বগি লাগিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।
শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় কমলাপুর স্টেশন সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
দেখা যায়, লোকজন উবার, পাঠাও, প্রাইভেট কার, সিএনজি ও রিকশা-ভ্যানে উঠে কমলাপুর স্টেশনে আসছেন। উদ্দেশ্য একটাই যেকোনো উপায়ে ট্রেনে উঠে গন্তব্যে যাওয়া। কিন্তু প্ল্যাটফর্মে প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন রেলওয়ে পুলিশ ও সাদা অ্যাপ্রোন পরা চেকাররা। তারপরও সাধারণ যাত্রীরা টিকিট কেটে লাইন হয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করছেন।
শাহানা ইসলাম ও আবির হোসেন তাদের দুই সন্তান ও লাগেজপত্র নিয়ে কল্যাণপুর থেকে উবার ভাড়া করে এসেছেন। ৫০০ টাকার ভাড়া ১০০০ টাকা দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে এসে যে পরিস্থিতি দেখছি তাতে সিলেট যাওয়া সম্ভব হবে কিনা বুঝতে পারছি না।’
পরীক্ষা শেষ করে চট্টগ্রামে যাবেন কামরুল ইসলাম। সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সেটিও মিলবে কিনা তা জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ও মা অসুস্থ। তাই যেকোনো উপায়ে আমাকে চট্টগ্রামে যেতে হবে। এই পরিস্থিতি তৈরি হবে বুঝতে পারিনি।’
স্টেশনে এক সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নীলুফার ইয়াসমীন। তিনি যাবেন খুলনায়। বাস বন্ধ থাকায় তিনি কমলাপুরে এসেছেন। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতিও ভয়াবহ। তিনি স্টেশন ম্যানেজারের কাছে ছুটে যান। ম্যানেজার তাকে আশ্বস্ত করেছেন, ‘অতিরিক্ত বগি লাগানো হবে। তখন বেশ কিছু টিকিট মিলতে পারে।’ সেই আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
জানা যায়, কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ট্রেনেই যাত্রীর চাপ বেড়েছে। এমনিতেই ট্রেনে যাতায়াতে যাত্রীদের আগ্রহ বেশি ছিল আগে থেকেই। এরমধ্যে সব ধরণের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সব চাপ ট্রেনে এসে পড়েছে। যে কারণে কমলাপুরে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে আজ অন্তত ২২টি ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে বা যাবে। এর অনেকগুলো ছেড়ে গেছে। সকাল থেকে যেগুলো ছেড়ে গেছে সেগুলো বাদ দিয়ে দুপুর থেকে যেসব ট্রেন যাবে তার সবগুলোতেই বগি সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এর সংখ্যা কমপক্ষে ২২ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীর চাপ বিবেচনায় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ২২টি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস, খুলনাগামী চিত্র ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী পদ্মা ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, দিনাজপুরগামী একতা, পঞ্চগড় ও দ্রুতযানসহ চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, নেত্রকোণা ও নোয়াখালী রুটের ট্রেনেও অতিরিক্ত বগি বাড়ানো হয়েছে। ফলে কিছুটা হলেও যাত্রীদের উপকারে আসবে।’
কমলাপুর রেল স্টেশনে উপস্থিত যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার অযৌক্তিকভাবে তেলের মূল্য বাড়িয়েছে। এর প্রতিবাদে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা ধর্মঘট পালন করছে। কারো কোনো কিছু হবে না। শুধু সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই হবে না। সরকারও কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। এক তেলের দাম বাড়ানোর কারণে সব সেক্টরে অরাজকতা শুরু হয়ে যাবে। এরইমধ্যে সবজি বাজারে আগুন লাগা অবস্থা তৈরি হয়েছে। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ কোথায় যাবে তা নিয়ে হয়তো কারো মাথা ব্যথা নেই। যাই হোক না কেন, দিন শেষে ভোগান্তিটা সাধারণ মানুষেরই থাকবে।
সারাবাংলা/ইউজে/এমও