বাম জোটে মতানৈক্য-পিছুটান, আসেনি হরতালের সিদ্ধান্ত
৮ নভেম্বর ২০২১ ২০:২৯
ঢাকা: জ্বালানি তেল ও বাসের ভাড়া বেড়ে যাওয়া নিয়ে জনমনে ক্ষোভ থাকলেও ‘জনগণের রাজনীতি’তে সম্পৃক্ত হিসেবে পরিচিত বাম গণতান্ত্রিক জোট কঠোর কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি। বাস ভাড়া বাড়ানোর পরদিনই তাৎক্ষণিকভাবে জ্বালানি বিভাগ ঘেরাও করতে গিয়েও পুলিশের বাধায় থেমে গেছেন তারা। এই জোটের পক্ষ থেকে হরতাল ঘোষণার চিন্তাভাবনা চললেও এ নিয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। দলের কোনো কোনো নেতা ‘পিছুটানে’র কথাও বলেছেন। সব মিলিয়েই যেকোনো ইস্যুতে প্রতিবাদ করতে একসময়ের জনপ্রিয় এই কর্মসূচিটি ঘোষণা করতে পারেনি বাম গণতান্ত্রিক জোট।
গত ৫ নভেম্বর ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা করার ঘোষণা দেয় সরকার। এর প্রতিক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়েও টানা তিন দিন পরিবহন ধর্মঘট পালন করে বাস বন্ধ রাখেন পরিবহন মালিকরা। শেষ পর্যন্ত রোববার (৭ নভেম্বর) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকের পর দূরপাল্লার বাস ও ঢাকা মহানগরের চলাচলকারী বাসের ভাড়া ২৬ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরবিহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
এই সিদ্ধান্তের পর রোববার রাত থেকেই চলছে দূরপাল্লার বাস। সোমবার থেকে নতুন ভাড়া কার্যকরের কথা থাকলেও রোববার রাত থেকেই দূরপাল্লার বাসে নেওয়া হয় বাড়তি ভাড়া। সোমবার ঢাকা মহানগরীতেও যাত্রীদের অভিযোগ— ২৬ শতাংশ নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের ‘পকেট কেটে’ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে।
জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর ক্ষোভ দেখা গেছে সাধারণ মানুষদের মধ্যে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট প্রতিবাদ জানিয়েছে, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু হরতাল বা এ ধরনের কঠোর কোনো কর্মসূচির ঘোষণা আসেনি রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে। কেবল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) আগামী ১৮ নভেম্বর ঢাকায় আধা বেলা হরতালের ঘোষণা দিয়েছে।
আরও পড়ুন-
- লঞ্চ ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
- ৩ দিন পর ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহন
- ‘কর কমালে বরং তেলের দাম কমানো যেত’
- ৫০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিচ্ছে লঞ্চ— অভিযোগ যাত্রীদের
- বেশিরভাগ গণপরিবহনে ২৬ শতাংশের বেশি ভাড়া নিচ্ছে
- ২৬ শতাংশ ভাড়া বাড়ল গণপরিবহনে, সোমবার থেকে কার্যকর
- ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি রোড সেফটি ফাউন্ডেশন
রোববার বাসের ভাড়া বাড়ানোর পর বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল সারাবাংলার। তারা জানিয়েছিলেন, প্রতিবাদ হিসেবে হরতালের কথা ভাবছেন তারাও। সোমবার শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সোমবার তারা হরতালের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এর বদলে বিক্ষোভ সমাবেশ, সারাদেশে জেলা প্রশাসন কার্যালয়, সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির দিকে হাঁটছে জোটটি।
সোমবার জোট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হরতাল নিয়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে শরিক দলগুলোর মধ্যে। তারা বলছেন, হরতালের আলোচনায় তারা একমত হতে পারেনি। কৌশলগত কারণেই দলগুলো এই ঘোষণায় একমত হতে পারেনি। বিকল্প হিসেবে আগামী ২২ ও ২৩ নভেম্বর সারাদেশে জেলা প্রশাসক কার্যালয় (ডিসি অফিস) ঘেরাও ও বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ২০ ডিসেম্বর সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালন করবে এই জোট। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে যাত্রার চিন্তাভাবনাও রয়েছে তাদের। তবে এ বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলছেন, তারা যেসব কর্মসূচি পালন করবেন, এসব কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা এলে এবং জ্বালানি তেলের দাম না কমালে তারা ‘কঠোর’ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। সেই কর্মসূচির মধ্যে হরতাল থাকতে পারে।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাবেক সমন্বায়ক আব্দুল্লা আল কাফি সারাবাংলাকে বলেন, হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার কথা আছে। বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ২০ ডিসেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি রয়েছে। এর আগে সারাদেশে ডিসি অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচিও আমাদের রয়েছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন হরতাল দিতে পারেনি— এমন প্রশ্নের উত্তরে বাম জোটের একটি শরিক দলের এক জন নেতা বলেন, হরতাল দেওয়ার বিষয়ে একমত হতে পারিনি। কারণ আমাদের অনেক পিছুটান রয়েছে। এছাড়া মতানৈক্য তো আছেই। তবে চলতি মাসে ২০ ও ২৩ তারিখে সারাদেশে ডিসি অফিস ঘেরাও কর্মসূচি আছে। প্রধানমন্ত্রীর অভিমুখে যাত্রার কর্মসূচিও আসবে।
বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের মাসব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে। আমরা সারাদেশেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করব।
হরতাল ঘোষণা নিয়ে কয়েকটি শরিক দলের ইতিবাচক অবস্থান থাকলেও এই কর্মসূচি দিতে পারছেন না কেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে বজলুর রশিদ বলেন, হরতাল কর্মসূচি পালন করলে জনগণের নৈতিক সমর্থন থাকবে। তবে এর আগে গণসংযোগের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সে কারণেই আমরা সারাদেশে কর্মসূচি পালন করব। তারপরও হরতাল কর্মসূচি যে আসবে না, সেটি কিন্তু বলা হয়নি। পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে হরতাল আসতেও পারে।
বাম জোটের শরিক দলগুলোর কোনো কোনোটির পিছুটান ও মতানৈক্যের কারণে হরতাল ডাকা যায়নি— শরিক দলের এক নেতার এমন বক্তব্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জোটের এই সমন্বয়ক বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য ও পিছুটান নেই। যে বলেছে, সে হয়তো সরকারের এজন্ট।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর