পায়রার ভাঙন থেকে বরগুনা রক্ষায় ৭৫১ কোটি টাকার প্রকল্প
৯ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৫৭
ঢাকা: বরগুনা জেলার নদী তীর এবং বাঁধের ঢাল সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘বরগুনা জেলার অধীন পোল্ডার ৪৩/১ ও ৪৪বি পুনর্বাসন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অংশ পায়রা নদীর ভাঙন হতে প্রতিরক্ষা’ শীর্ষক নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৭৫১ কোটি ২৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে লবণাক্ত পানির প্রবেশ রোধ করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পায়রা নদীর ভয়াবহ ভাঙন হতে স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা ও রাস্তাঘাটসহ প্রায় ৩০ কোটি ২০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১৬ জুন অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উপকূলীয় অঞ্চলকে উচ্চ জোয়ার, বন্যা, জলোচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার্থে ষাটের দশকে পোল্ডারাইজেশন করার মাধ্যমে পুরো উপকূলীয় এলাকাকে ছোট ছোট পোল্ডারে বিভক্ত করা হয়। এতে সমস্ত এলাকা স্থায়ী কৃষি জমিতে পরিণত হয়। কিন্তু প্রতিবছর বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এবং ঘূর্নিঝড় সাইক্লোনের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিবছর পায়রা নদীর ভাঙনে গড়ে প্রায় ২৫ মিটার জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়। অথচ পোল্ডারগুলো পুনর্বাসনের জন্য ব্যাপক কোনো পুনর্বাসন কর্মসূচি নেয়া হয়নি।
২৩ বছরেও সংস্কার হয়নি শহর রক্ষা বাঁধ, ভাঙছে আমতলী
এছাড়া সম্প্রতি আমতলী উপজেলার পোল্ডার ৪৩/১ কিলোমিটার ৩০.৭০০ হতে কিলোমিটার ৩১.২০০ ও কিলোমিটার ৩২.৭০০ হতে ৩৩.৮০০ অংশে এবং পোল্ডার ৪৪ এর কিলোমিটার ২২.৩০০ অংশে অর্থাৎ ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পায়রা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গঠিত কমিটির মাধ্যমে সমীক্ষা প্রতিবেদন সম্পাদন করে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৫ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৫.৫৬০ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ এবং ১৮০ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ ও মেরামত করা হবে। এছাড়া ৮.৬০০ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, ৬১.৫০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, ১৫ কিলোমিটার কচুরীপানা অপসারণ, ৫টি ব্রিজ এবং ৪৪ হাজার ৩৫২টি বনায়ন করা হবে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলী উপজেলার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামোগুলো পায়রা নদীর ভাঙন হতে রক্ষাসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও লোনা পানি প্রবেশ রোধ করা সম্ভব হবে। এসব বিবেচনায় একনেকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/জেজে/এমও