সন্ত্রাসী-সাম্প্রদায়িক শক্তি যেন যুবলীগে না আসতে পারে
১১ নভেম্বর ২০২১ ১৮:০৩
ঢাকা: চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী কিংবা সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে সম্পর্কিত কেউ যেন যুবলীগে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন যুবলীগের সাবেক নেতারা। তবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আজকের যুবলীগ অনেক প্রশংসার অধিকারী বলেও দাবি তাদের।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা, কর্মচিত্র প্রদর্শনী ও তৃতীয় ধাপের আশ্রয় প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংগঠনটির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
অনুষ্ঠানে আমির হোসেন আমু বলেন, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মনি একটি সংগ্রামী ভূমিকার মধ্য দিয়ে এই জায়গায় অবতীর্ণ হতে পেরেছিলেন। তার নেতৃত্বে এই দেশের যুবসমাজ অত্যন্ত সুসংগঠিত ছিল এবং সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে আমাদের এই প্রগতিশীল যুব সংগঠনটি অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছিল। শেখ মনি বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে যুব সমাজের কাছে একটি ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
‘বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর তার নেতৃত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা, তাকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এবং তার সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে যুবলীগ ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছে। গতকালও (বুধবার) যে নূর হোসেন দিবস পালন হলো, সেই নূর হোসেনও ছিলেন যুবলীগের সদস্য। এমনিভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যুবলীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে আত্মাহুতি দিয়েছেন,’— বলেন আমির হোসেন আমু।
বক্তব্যে তিনি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুবলীগের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির প্রশংসা করেন। করোনা সংক্রমণ তীব্র থাকার সময় যুবলীগ যেভাবে আক্রান্তদের মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডিার বিতরণ করেছে, খাদ্য সহায়তা দিয়েছে, সেসব কর্মকাণ্ডেরও ভূঁয়সী প্রশংসা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু আসার আগে এখানে যেসব সরকারি আমলারা চাকরি করতেন, তারা পাকিস্তানের পক্ষেই কাজ করেছিলেন। মনি ভাই বলেছিলেন, মোনায়ামের আমলা দিয়ে মুজিবের শাসন চলবে না। ওদের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা পাকিস্তানি। সুতরাং নতুন প্রশাসন গড়তে হবে। কিন্তু ওই সময় বঙ্গবন্ধু আসার আগে যে সরকার, তারা কোনো ধরনের স্ক্রুটিনি না করেই সবাইকে কনটিউশন অব দ্য সার্ভিসেস দিয়ে দিলো! এ বিষয়টি নিয়েই মনি ভাইয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। মনি ভাই চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এরা তো পাকিস্তানি ভাবাপন্ন লোক। এখন রাতারাতি তারা বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করবে, এটা আশা করা যায় না। এটি দেশের জন্য ভালো হলো না।
শেখ সেলিম আরও বলেন, এরপর বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-যুবক যারা বিভিন্ন জায়গায় ছিল, তাদের এনে বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে ভাইভা নিয়ে প্রথম ৩০০ লোককে নেওয়া হলো। মনি ভাই বঙ্গবন্ধুকে বললেন, আপনি ছিলেন না। আপনি আসার আগে এই বাংলায় মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন থানায় ছিল। কোথাও একটা ডাকাতি হয় নাই, একটা খুন হয় নাই, একটা লুট হয় নাই, এরাই প্রশাসন চালাত। এভাবে মনি ভাই যেটা ভালো মনে করতেন, সেটা বলতে কোনো সময় দ্বিধা করতেন না।
শেখ সেলিম বলেন, এরপর শুরু হলো ষড়যন্ত্র। একদিকে প্রতিবিপ্লবীরা, আরেক দিকে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রদের একটি অংশ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে অতি বিপ্লবীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল। তখন মনি ভাই বলেছিলেন, বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লব আসবে। মোনায়েমের আমলা দিয়ে মুজিবের শাসন চলবে না। এখনই আমাদের সতর্ক হতে হবে। না হলে এরা আমাদের ওপর আঘাত হানবে।
শেখ ফজলুল হক মনির রাজনৈতিক দূরদর্শিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তার ছোট ভাই শেখ সেলিম। তিনি বলেন, মনি ভাই জীবনে কোনোদিন সুখ-শান্তি ভোগ করেননি। বঙ্গবন্ধুর মতোই কষ্ট করে গেছেন। তার আদর্শকে যুবলীগের নেতাকর্মীদের অনুসরণ করতে হবে। মনি ভাই অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন সংগঠক। আজ মনি ভাই নেই। মনি ভাইয়ের ছেলে শেখ পরশেরও এখানে আসার কথা না। বেঁচে থাকার কথাই তো ছিল না পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর। আল্লাহর অশেষ রহমতে ওরা আজ মানুষ হয়েছে। আজ বাবার সংগঠন তার হাতে। আমি তাকে (শেখ পরশ) বলব, তোমার কিছুই পাওয়ার নেই। তোমার কিছুই চাওয়ার নেই। তোমার বাবার আদর্শকে অনুসরণ করো এবং বাবা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন প্রতিষ্ঠা করার জন্য তুমি কাজ করবে— এটি আমি বিশ্বাস করি। তুমি ন্যায়, সত্য, আদর্শ ও তোমার বাবার কথা চিন্তা করে যুবলীগকে সংগঠিত করো। নিশ্চয় তুমি জয়ী হবে।
চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক শক্তি, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, জামায়াতে ইসলামি কিংবা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে সম্পর্কিত— এরা কেউ যেন যুবলীগে আসতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান শেখ সেলিম। তিনি বলেন, আমরা সত্য ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা আদর্শের জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা মানুষের জন্য সংগ্রাম করছি। আমাদের জয় হবেই। কিছু ঘাত-প্রতিঘাত আসতে পারে। কিন্তু আল্লাহ সহায় থাকলে কোনো ঘাত-প্রতিঘাত আমাদের রুখতে পারবে না।
এর আগে, যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভোরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে। পরে সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা এবং সকাল সাড়ে ৯টায় বনানী কবরস্থানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহিদ শেখ ফজলুল হক মনিসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহত সব শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাত হয়। বিকেল বঙ্গবন্ধুর এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
আমির হোসেন আমু যুবলীগ যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শেখ ফজলুল করিম সেলিম শেখ ফজলুল হক মনি শেখ ফজলে শামস পরশ