মামলা জট দূর করতে মধ্যস্থতাই আগামীর ভবিষ্যৎ
১৪ নভেম্বর ২০২১ ০৯:১০
ঢাকা: মামলা নিষ্পত্তিতে নানারকম জটিলতা থাকায় সময়ক্ষেপণের ফলে আমাদের দেশে মামলার জট সমস্যা মিটছে না। আদালতের বাইরে এডিআর (অল্টারনেটিভ ডিসপিউট রেজুলেশন) মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খালেদ হামিদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান আইনের অধিকার ভোগ করতে পারবেন। কিন্তু নানারকম জটিলতার কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে সময় লাগে, যার ফলে মামলার জট সহজে মিটছে না। এই সমস্যা সমাধানে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা কাজে লাগাতে হবে। আর এই মধ্যস্থতাই (এডিআর) হতে যাচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অদূর ভবিষ্যৎ।
সারাবাংলার আইন বিষয়ক নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বারস’-এ যুক্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) তিনি এসব কথা বলেন। এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তি কি আদৌ সম্ভব? সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফ্ফাত গিয়াস আরেফিনের পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় এ পর্বের প্রধান আলোচক ছিলেন ড. খালেদ হামিদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার এট ল’, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, এফ সি আই আরবিট্রেটরস, ভাইস প্রেসিডেন্ট,ব্যারিস্টারস’ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ। বিশেষ আলোচক ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার সাদাত, পরিচালক, একাডেমিক এবং লিগাল এমপাওয়ারমেন্ট, সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
ব্যারিস্টার খালেদ হামিদ বলেন, গত দুই দশক ধরে আদালতের বাইরে গিয়ে কীভাবে বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আদালতে বাইরে মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতা, সালিশ, আলাপ-আলোচনাসহ অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্যে বিরোধ মেটানো সম্ভব। মধ্যস্থতাকারী দুইপক্ষের মধ্যে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে নিরপেক্ষভাবে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করেন। পুরো প্রক্রিয়াটিই গোপনীয়তার সঙ্গে সংগঠিত হবে। মধ্যস্থতাকারী কোন রায় বা সিদ্ধান্ত দেন না বরং দুই পক্ষের মতামত শুনে একটি মধ্যাবস্থায় আনার চেষ্টা করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত দুই পক্ষ সম্মিলিত হয়ে স্বাক্ষর না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। এখানে দুই পক্ষের মধ্যে যেকোনোভাবেই জিততে হবে এমন মানসিকতার জায়গা থাকে না। ফলে এই প্রক্রিয়ায় কোনো আইনজীবী যুক্ত থাকলে তিনি যথেষ্ট কোমলভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
এডিআর (অল্টারনেটিভ ডিসপিউট রেজুলেশন)) করতে হবে তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সম্প্রতি অনেক দেশেই মেডিটেশন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে নিয়ম থাকলেও ওইভাবে চালু হয়নি। বিশ্বের অনেক দেশ এটার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার সাদাত বলেন, মিডিয়েশন অনেক আগে থেকে আমাদের সমাজে চলে আসছে। এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) নতুন কিছু না। বর্তমানে দেশে ৪০ লাখ মত মামলা পেন্ডিং রয়েছে। এডিআরের মাধ্যমে অনেকেটায় মামলার জট কমিয়ে আনা সম্ভব। মিডিয়েশনের কাজ হচ্ছে বিরোধ বিষয় নিষ্পত্তি করণে সহায়তা করা। কোনো রায় বা শাস্তি দেওয়া না। মিডিয়েশনের মাধ্যমে দুইপক্ষকে একত্রে করে একটি চুক্তির মাধ্যমে নিয়ে আসতে পারে। সেখানে একজন মেডিয়েটর মূল ভুমিকায় থাকেন।
বক্তরা আরও বলেন, মিডিয়েশন করার মূল উদ্দেশ্য হলো বিরোধ নিষ্পত্তি করা। দুইপক্ষ যখন চুক্তি করছে, তখন তাদের মধ্যে একটা লিগ্যাল চুক্তি হচ্ছে। আর মেডিটেটর হচ্ছে বিরোধী পক্ষদের সেই চুক্তি প্রণয়ন করতে সহয়তা করা ব্যক্তি। একবার যখন চুক্তি হয়ে যায়, এর বিরুদ্ধে আপিল, রিভিশন করা যাবে না। তবে রিভিউ করার বিধান রয়েছে। এই সম্পর্কে ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ৮৯ ধারায় (ক) উপধারা ছাড়াও, অর্থঋণ ও লেবার কোড আইনসহ অন্যান্য আইনেও তা উল্লেখ রয়েছে।
একপ্রশ্নের উত্তরে বক্তরা বলেন, যদি কোনো পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করে তাহলে আবার তারা আদালতে যেতে পারবেন। মিডিয়েশন শুধুমাত্র আইনজীবীর মাধ্যমে করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যেকোনো নিরপেক্ষ যোগ্যলোক মিডিয়েশন তা করতে পারবেন।
সারাবাংলা/এআই/আরএফ/এনএস