বিচারিক ক্ষমতা হারালেন রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার বিচারক
১৪ নভেম্বর ২০২১ ১০:১০
ঢাকা: রায়ের পর্যবেক্ষণে ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার ‘পরামর্শ’ দেওয়া বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক হিসেবে বনানীর রেইনট্রিতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি ওই ‘পরামর্শ’ দিয়েছিলেন।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তার বিচার ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাকে বর্তমান কর্মস্থল হতে প্রত্যাহার করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে অদ্য ৯:৩০ ঘটিকায় আইন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের আদালত রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। ধর্ষণের ঘটনায় ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে আলামত পাওয়া যায় না উল্লেখ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে ৭২ ঘণ্টা পরে ধর্ষণের মামলা না নিতে পুলিশকে ‘পরামর্শ’ দেন এই বিচারক।
২০১৭ সালে দায়ের করা এই মামলাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল অনলাইনে-অফলাইনে। আসামি সাফাতসহ বাকিদের গ্রেফতারে নানা ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেন। রায়ে পাঁচ আসামির সবাই খালাস পাওয়ার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের পর্যবেক্ষণও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আইনজীবী, নারী অধিকারকর্মী, সমাজবিজ্ঞানী, অপরাধবিজ্ঞানীসহ সচেতন মহলও এই মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না নিজেও ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘৭২ ঘণ্টা পরে কেন, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি যখনই অভিযোগ দেবেন, তখনই সেই অভিযোগ পুলিশকে নিতে হবে।’ পর্যবেক্ষণের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মামলা রুজু করার জন্য বিধিনিষেধ বিচারপ্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত করবে, যা মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি।’
শুধু তাই নয়, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেও এই পর্যবেক্ষণকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছেন। শনিবার (১৩ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘উনার (বিচারক) অবজারভেশনে ৭২ ঘণ্টা পরে পুলিশ যেন কোনো ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়, এই যে বক্তব্য উনি দিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক।’ একই অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী জানান, ওই বিচারকের ক্ষমতা সিজ (কেড়ে নেওয়া) করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেবে আইন মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন:
বিচারক কামরুন্নাহারের পর্যবেক্ষণ বেআইনি: আইনমন্ত্রী
৭২ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণ মামলার পরামর্শে বাড়তে পারে নারী নির্যাতন
‘বিচারকের ক্ষমতা প্রত্যাহারে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হবে’
রায়ে অসন্তোষ ভিকটিমের পরিবার, আসামিপক্ষের উল্লাস
‘৭২ ঘণ্টা পরে কেন, যখনই নালিশ করবে নিতে হবে’
সারাবাংলা/কেআইএফ/এএম
ধর্ষণ মামলার রায় বিচারক কামরুন্নাহার রায়ের পর্যবেক্ষণ রেইনট্রি ধর্ষণ মামলা